রোহিঙ্গাদের দেখতে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্ব ব্যাংক প্রধান

রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে, তাদের দুর্দশার কথা তাদের মুখ থেকে শুনতে বাংলাদেশে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2018, 11:23 AM
Updated : 23 June 2018, 11:23 AM

এমন এক সময়ে তারা এই সফরে আসছেন, যখন রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে।  

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের মুখপাত্র মেহরিন আহমেদ মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জিম ইয়ং কিম আগামী ১ ও ২ জুলাই কক্সবাজার সফর করবেন। 

জাতিসংঘের ঢাকা অফিস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না দিলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা  আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

কর্মকর্তারা আশা করছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট দুজনই ঢাকা পৌঁছাবেন ৩০ জুন সন্ধ্যায়। আগামী ২ জুলাই তাদের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখার কথা রয়েছে।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১৮ জুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট তাদের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরেও যাবেন। 

বিশ্ব ব্যাংক কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কয়েক কিস্তিতে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার দিতে পারে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।  

সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করলেও নানা জটিলতায় বিষয়টি এগোয়নি।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলে আসছে,বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমারকে।

জাতিসংঘ মহাসিচব গুতেরেসও সে সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ওই চুক্তি করার সময় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয় সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সঙ্গে রাখা জরুরি ছিল।

গুতেরেস এর আগেও ইউএনএইচসিআরের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই হবে তার প্রথম সফর। অবশ্য বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দুই বছর আগেই একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।

এবারের সফরে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

এদিকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিচার করা যায় কি না- সেই প্রশ্নে একজন কৌঁসুলির আবেদনে সম্প্রতি মিয়ানমারের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হেগের ওই আদালত। মিয়ানমার সরকারকে এর জন্য ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।