রোববার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান শুনানির জন্য ১০ মে নতুন তারিখ রেখে ওইদিন খালেদা জিয়াকে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
আসামিপক্ষ ওই সময় পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
অসুস্থতার কারণে বিএনপি নেত্রীকে আদালতে হাজির করা যায়নি জানিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসামির হাজিরার ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানানো হলেও বিচারক তাতে সায় দেননি।
এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
আর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে ওই কারাগার থেকে সিকি কিলোমিটার দূরত্বে বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠ সংলগ্ন বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।
এ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামানই এতিমখানা দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজার রায় দেন।
সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্যতম আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। এরপর বিচারক ২৮ মার্চ ও ৫ এপ্রিল শুনানির জন্য তারিখ রাখলেও কারা কর্তৃপক্ষ কোনোদিনই খালেদা জিয়াকে হাজির করতে পারেনি।
রোববার রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যে হাজিরা পরোয়ানা ফেরত দিয়েছে, সেখানে লেখা ছিল ‘নট ফিট ফর টুডে’।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ৫ এপ্রিল আদালতে বলেছিলেন, এ মামলায় তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কারাবান্দি খালেদা জিয়ার হাজিরার ব্যবস্থা নিতে আবেদন করবেন।
রোববার তিনি মৌখিকভাবে সেই আবেদন জানিয়ে ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের দুটি মামলা ওইভাবে পরিচালনার উদাহরণ তুলে ধরেন। অন্যদিকে খালেদার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এর বিরোধিতা করেন।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিচারক প্রথমে ১৪ মে শুনানির তারিখ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সানাউল্লাহ মিয়া তাতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, ওই দিন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন হওয়ায় আইনজীবীরা সবাই ব্যস্ত থাকবেন।
এরপর বিচারক শুনানির তারিখ এগিয়ে ১০ মে ঠিক করে দেন।
এ সময় খালেদার আইনজীবীরা জামিন বাড়ানোর আবেদন করলে ওইদিন পর্যন্ত তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক।
তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব বিআইডব্লিউটিএয়ের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানও এ মামলায় আসামি।
আসামিদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক। মুন্না ও মনিরুল জামিনে আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি যুক্তিতর্কের শুনানিতে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে দুদক।
অপরাধ প্রমাণিত হলে দুদক আইনে তাদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।