শূন্য রেখায় থাকা এক রোহিঙ্গা পরিবার রাখাইনে ফিরেছে

দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে এসে গত কয়েক মাস ধরে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে শূন্য রেখায় অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি পরিবার রাখাইনে মিয়ানমার সরকারের আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে গেছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2018, 09:07 AM
Updated : 15 April 2018, 09:07 AM

মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনের জানিয়েছে, পাঁচজনের ওই পরিবারটি শনিবার রাতে রাখাইনের তংপিওলেতেয়া অভ্যর্থনা ক্যাম্পে পৌঁছায়।

তবে তাদের এই প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন,  প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা ঘুমধুম ঘুমধুম ইউনিয়নে তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থান নিয়ে আছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আসেনি।

“নো-ম্যানস ল্যান্ডে যারা আছে তারা প্রত্যাবাসন চুক্তির অধীনে নয়, কারণ তারা শূন্যরেখায় মিয়ানমারের অংশে রয়েছে। তবে কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে শূন্য রেখায় যারা আছে, তাদেরও ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি রয়েছে বাংলাদেশ।”

নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে পরিবারটি ফিরে গেছে, তাদের কর্তার নাম আকতার আলম। এক সময় তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে এসে শূন্য রেখায় অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শূন্য রেখায় থাকা একজন রোহিঙ্গা সদস্য জানান, আকতার স্বেচ্ছায় ফেরত গেছে। মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সহায়তায় তারা শনিবার রাতে ঢেকিবনিয়া সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে রাখাইনে যায়। সেখানে গিয়ে তারা এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) সংগ্রহ করেছে বলে শুনেছি।”

গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

ওই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে মিয়ানমার।

সেই লক্ষে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি  তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু দুই দেশের প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় চুক্তির আওতায় এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তাদের বাইরে আরও কয়েক হাজার মানুষ ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে শূন্য রেখায় অবস্থান নিয়ে আছেন কয়েক মাস ধরে। আকতার আলমের পরিবার তাদের সঙ্গেই ছিল। 

মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

সেখানে বলা হয়েছে, একটি মুসলিম পরিবারের পাঁচজন সদস্য রাখাইনের তংপিওলেতেয়া অভ্যর্থনা ক্যাম্পে পৌঁছেছে। ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের পরিচয় খতিয়ে দেখছেন। সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মীরা ওই পরিবারকে চাল, লুঙ্গি, টি শার্ট, কম্বল, মশারি এবং রান্নার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইনের ভেতরে পড়ায়’ ওই পরিবারের সদস্যদের (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। যাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেওয়া হয়, সেখানেও রোহিঙ্গা পরিচয়ে জাতীয়তার তথ্য থাকে না।    

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সরকারের অনেকেই রোহিঙ্গাদের আখ্যায়িত করে ‘বাঙ্গালি’ হিসেবে যদিও যুগ যুগ ধরে তারা রাখাইনের ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন।

জাতিসংঘ বলে আসছে, কক্সবাজারে ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির ফয়সালা করতে হবে। পাশাপাশি তারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সব পক্ষকে।