বিদেশে গেলে ডাস্টবিন খোঁজা, এখানে যত্রতত্র ময়লা ফেলা: মাশরাফি

পরিবেশ রক্ষায় সাধারণের উদাসীনতার সমালোচনা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, যেসব মানুষ বিদেশে গিয়ে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিনের অপেক্ষায় থাকেন, তাদের অনেকেই দেশে ফিরে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 01:45 PM
Updated : 20 March 2018, 02:02 PM

নিজের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের অনুরোধের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় একটি পুরনো গাছ কাটলে তার বদলে ২০টি গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে ‘সবুজ পরিবেশ আন্দোলন’ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি।

তিনি বলেন, “সবুজ পরিবেশ আন্দোলন! প্রথমেই আমার কাছে সমস্যা মনে হচ্ছে আন্দোলন। খারাপ লাগছে আন্দোলন কেন করতে হবে সবুজ পরিবেশের জন্য? সবুজ পরিবেশ তো আমাদের ছিল এবং থাকবে এটাই আমরা আশা করি।

“তারপরও যেহেতু পরিস্থিতি এই দিকে নাই, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্রগ্রাম শহরে, তাই এই আন্দোলন করতে হবে। ঢাকার বাইরের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখা যাবে, সবুজ কিছুটা পাওয়া যায়। এগুলোকে আরেকটু সংরক্ষণ করলে আরও ভালো কিছু পাওয়া যাবে।”

ঢাকার পরিবেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, “ঢাকার অবস্থাটা এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা যখন বাইরের দেশে যাই তখন ময়লা ফেলতে ময়লার বিন না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আর আমরা এখানে যখন কিছু খাই ময়লাটা যেখানে ইচ্ছা ফেলে দিচ্ছি। তার মানে আমরা নিজের দেশকে ভালো না বেসে অন্যের দেশকে ভালোবাসি। সুতরাং এই বিষয়গুলোতে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।”

নদী দূষণে রোগ-ব্যধি বাড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের নদীর কথা যদি বলি, এখন স্যুয়ারেজ সিস্টেমের লাইন সরাসরি নদীর সাথে করা হয়েছে, এতে করে দূষিত হচ্ছে। নদীতে বাজে পরিস্থিতিতে যে বাচ্চারা গোসল করছে, তাতে তাদের নানা রোগ হচ্ছে। এই সমস্য সমাধানের জন্য শুধু আমি আপনি বলে নয়, যার যার স্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

ভালো কাজ করতে গেলে প্রথম প্রথম সমাজের অনেকের বাঁকা চাহনিতে পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই লক্ষ্য পৌঁছানো যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভালো কাজ করতে গেলে দেখবেন সমালোচনাটাই বেশি হচ্ছে, আর এটাই স্বাভাবিক। আপনি একা একা ময়লা পরিষ্কার করছেন, দেখবেন পাশের বাড়ির লোকটি সমালোচনা করছে। তবে এভাবে এক সময় দেখবেন অন্যরাও এগিয়ে আসবে। তাইলে পদক্ষেপ নিতে তো আর দোষ নেই।

“এক সময় আমি দেখেছি, গাছ কেটে পরিবারের সদস্যের চিকিৎসা করানো হয়েছে, মেয়ের বিয়ের খরচ দিতে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। আর এখন রাস্তা বানানোর জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। একটা গাছ বড় হতে ২০-২৫ বছর লাগে, তাই একটি গাছ কাটলে ২০টি গাছ লাগান।”

এ সময় নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘নড়াইল ফাউন্ডেশন’ থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়ার কথা জানান মাশরাফি।

সদ্য শেষ হওয়া নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় ‘মন খারাপ’ জানিয়ে ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক বলেন, “মনটা একটু খারাপ, তাই খেলা নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ অবশ্যই সামনে জিতবে।”

অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হলেও মাশরাফির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মিলনায়তনের দর্শক গ্যালারি ছাপিয়ে যায়, দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অনেকে। কাছ থেকে মাশরাফির দেখার জন্য দর্শক সারি থেকে কয়েকজন মঞ্চে উঠে পড়েন। স্বেচ্ছাসেবীরা বারবার মাইকে ঘোষণা ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েও মঞ্চের জটলা কমাতে পারেননি।

পরে অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমানকে নিয়ে ‘সবুজ পরিবেশ আন্দোলন’র ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন মাশরাফি।

এর আগে সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “পরিবেশ নিয়ে চিন্তা আমাদের অবশ্যই করতে হবে। কারণ পরিবেশের ধ্বংস আমাদেরও ধ্বংস করে দেবে। পরিবেশ টিকে থাকলে আমরাও টিকে থাকব।”

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “পরিবেশ আন্দোলন শুধু দেশ নয়, দেশ ছাপিয়ে তা বিশ্বকে নিয়েও ভাবে। কারণ পৃথিবীটাই একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ।”

অনুষ্ঠানে আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, “সারা বিশ্বে আমাদের মতো ছোট একটা উদীয়মান দেশ পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।”

গত বছর সিলেটের হাওর অঞ্চলে বন্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বানভাসীর দেশ বাংলাদেশ। পরিবেশের যদি সামান্য ক্ষতি হয় তাহলে আমাদের দেশকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।”

বঙ্গবন্ধু পরিবেশবাদী ছিলেন মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, “নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি সব সময় মানুষের কথা বলতেন, পরিবেশের কথা বলতেন।

“প্রকৃতিই যদি না থাকে, আমার প্রাচুর্যের সবই অর্থহীন হবে।”

‘সবুজ পরিবেশ আন্দোলন’র সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বক্তব্য রাখেন।