ইউএস-বাংলা দুর্ঘটনা: ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া দুটি লাশ শনাক্ত করা ‘সম্ভব নয়’

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত যে তিন বাংলাদেশির লাশ এখনও দেশে ফেরেনি, তাদের মধ্যে দুজনকে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নেপাল ঘুরে আসা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেল মাহমুদ।

উম্মে হাবিবা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 11:02 AM
Updated : 20 March 2018, 11:14 AM

তাদের লাশ শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই সহযোগী অধ্যাপক।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়ে যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন, তার মধ্যে ২৩ জনের লাশ শনাক্তের পর সোমবারই দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে খুলনার মোল্লা আলিফুজ্জামান, বরিশালের পিয়াস রায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজরুল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের লাশ ফেরত আসেনি।

এই দুর্ঘটনার পরপরই সরকার একটি চিকিৎসক দল নেপালে পাঠায়, তার মধ্যে সোহেল মাহমুদসহ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। সোমবার তারাও দেশে ফিরে আসেন।

ডা. সোহেল মাহমুদ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনজনের মধ্যে একজনের ব্যাপারে আমরা মোটামুটি কনফার্ম যে এটা নজরুল ইসলামের লাশ। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলেও আরও কিছু তথ্যের প্রয়োজন সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে, সেসব তথ্য দিয়ে না হলে ডিএনএ নমুনা লাগবে।

“আর বাকি দুজনের ক্ষেত্রে ডিএনএ নমুনা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।”

নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও সোমবার ২৩ জনের লাশ ফেরানোর সময় বলেছিলেন, বাকি তিনজনের মধ্যে একজনের লাশ শনাক্ত করা হলেও নেপালি কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।   

ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্তে কতদিন লাগবে- জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, “আরও সাত-আট দিন সময় লাগবে। নেপাল থেকে কাল লাশের ডিএনএ পাঠালে এখানে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে। এটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”

নজরুল ইসলাম, মোল্লা আলিফুজ্জামান ও পিয়াস রায়ের লাশ এখনও ফেরত আসেনি

সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের উপ প্রধান আহমেদ ফেরদৌস ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, লাশ শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে হাত দিয়েছেন তারা।

সিআইডির দুই কর্মকর্তা এএসপি আবদুস সালাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ স্পেশালিস্ট আশরাফুল আলম চিকিৎসক দলের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন।

ডা. সোহেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুটো টিম নেপালের কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন। লাশ শনাক্তকরণের টিমে তিনি ও সিআইডির দুজন ছিলেন।

কীভাবে লাশগুলো শনাক্ত করেছেন- জানতে চাইলে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “কাউকে কাউকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে আইডেনটিফিকেশন মার্ক ব্যবহার করে, আবার কারও ক্ষেত্রে পার্সোনাল বিলংগিংস দিয়ে শনাক্ত করা হয়েছে।”

‘পার্সোনাল বিলংগিংস’-এর ক্ষেত্রে ঘড়ি, আংটি, দাঁত কিংবা উচ্চতা মেলানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও লাশের পকেটে থাকা সিম কার্ড দিয়ে শনাক্ত করার চেষ্টাও করা হয় বলে জানান তিনি।

নেপালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার বিষয়ে ডা. সোহেল বলেন, “ওখানকার ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট, অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্ট ও ফরেনসিন ডিএনএ ল্যাবের সাথে আমরা একত্রে কাজ করেছি। ওরা ওদের নিয়ম মেনেই কাজ করেছে।”

সেখানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “লাশের স্যাম্পল আইডেন্টিফিকেশন, পোস্টমর্টেম- এগুলো করতে খুব ব্যস্ত সময় কেটেছে।”

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় নিহতের লাশ শনাক্তের পেশাগত কাজের মধ্যেও মানুষ হিসেবে নিজের খারাপ লাগার কথাও জানান এই চিকিৎসক।

“খারাপ লেগেছে যখন ২৩টা লাশ এম্বেসিতে নিয়ে আসলাম, আসার পরে ২৩টা কফিন একসাথে সাজানোর পর তাদেরকে যখন জানাজা দিতে দাঁড়ালাম, ওই টাইমটায় খারাপ লেগেছে।”