প্রশ্নফাঁস রোধ করা না গেলে সব অর্জন ধূলিসাৎ হবে: মেনন

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের সব অর্জন ধূলিসাৎ হবে বলে সতর্ক করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2018, 05:04 PM
Updated : 19 Feb 2018, 05:19 PM

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে অনেক কথা হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ‘কোনো দায়িত্ব’  নিচ্ছে না মন্তব্য করে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন।

প্রশ্ন ফাঁস ‘নতুন কিছু নয়’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায় সোমবার রাতে সংসদে বিষয়টি নিয়ে নিজের এই অবস্থান জানান রাশেদ খান মেনন।

দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ১৪ দলের দুর্নীতি রোধের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সূচনা মন্তব্য করে বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত অর্থপাচার ও ঋণ জালিয়াতির বিচার প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খুন-ধর্ষণ, দলবাজি-দখলবাজি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে বলেও সতর্ক করেছেন রাশেদ খান মেনন।

সোমবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় মন্ত্রী মেনন বলেন, “শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারি রোধ করতে না পারলে সকল অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কেন, কোন কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে পারছে না।

পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্নপত্র

“শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করছে না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব গ্রহণ করছে না।”

তিনি সংসদে এই বক্তব্য দেওয়ার আগে বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ফাঁস রোধে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জবাবে তিনি বলেন, “মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করতে গেছে, না কি সচিব গেছে?

“দেখুন প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা কোনো নতুন কিছু না, এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না, এটা হল বাস্তবতা।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রই পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ফেইসবুকে চলে আসে।

ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকার পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগ থেকে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন তা বাস্তবায়নের পর ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

প্রশ্ন ফাঁস রোধের প্রয়োজনীতা বোঝাতে মেনন বলেন, “সাউথ আফ্রিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লেখা আছে ‘যদি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও- তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নেও’। আজকে আমাদের এখানে যে প্রতারণা ঘটছে তা নিশ্চিতভাবে আমাদের জাতিকে ধ্বংস করবে।”

মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, “মাদ্রাসার শিক্ষার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? তা কী আমরা খতিয়ে দেখছি?

“মাদ্রাসা শিক্ষায় পঞ্চম শ্রেণি পড়া শিক্ষার্থী নামাজের নিয়ম জানে না- সুরা ফাতেহা পড়তে পারে না। এটাই হচ্ছে শিক্ষার চিত্র। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হবে।”

মেনন আরও বলেন, “বহুমুখী শিক্ষা সমাজ ব্যবস্থাকে বিভক্ত করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয় মাদকাসক্ত হবে না হয় জঙ্গিতে পরিণত হবে।”

অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দুর্নীতির জন্য বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড হয়েছে। এটি বিএনপি-জামাত জোটের দুর্নীতির ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। কিন্তু আজকে আমরা দেখছি, সমস্ত দেশের মধ্যে দুর্নীতির বিশাল প্রচলন হয়েছে। অনেকেই বেগম জিয়ার সাজার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খোঁজে।

“আমাদের ১৪ দলের প্রতিশ্রুতি ছিল, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন দূর করা। খালেদা জিয়ার এই দণ্ডদান ১৪ দলের সেই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সূচনা মাত্র। তবে এখন অনেক বড় বড় দু্র্নীতি আমাদের হাতের মাঝে থেকে যাচ্ছে। অর্থপাচার, ঋণ জালিয়াতির তদন্ত আশা করি করা হবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাকিস্তান পানামা পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারলে আমরা পারছি না।”

সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “ব্যাংকিং খাতে এখন নৈরাজ্য চূড়ান্ত। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য মূলধন জোগান দিতে হচ্ছে। রিজার্ভ চুরির টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানি না। প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে। এই পাচারকৃত অর্থ দিয়ে দেশের কয়েকটি বাজেট হতে পারে।”

তিনি বলেন, “এ বছর নির্বাচনের বছর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস-পানি সঙ্কট- এসব দৈনন্দিন বিষয় মানুষকে আলোড়িত করে। আতঙ্কিত করে খুন-ধর্ষণ-গুমের ঘটনাবলী। মানুষ বিরক্ত হয় দলবাজি-দখলবাজি-অন্তর্দলীয় কোন্দলে। এসব ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে।”

বিএনপির সমালোচনা করে মেনন বলেন, “সরকার সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট তাদের পুরনো গান গেয়েই যাচ্ছে। আসলে নির্বাচন নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। প্রতিদিন সেকথা স্পষ্ট হয়ে ‍উঠছে।”