২০১৭ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭৩৯৭

বাংলাদেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে বলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2018, 02:09 PM
Updated : 13 Jan 2018, 02:09 PM

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী বছরে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে চার হাজার ৯৭৯টি দুর্ঘটনায়।

শনিবার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বার্ষিক এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৮ শতাংশ খবর গণমাধ্যমে এলেও তার ৪০ শতাংশ প্রকাশ পায়।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে তৈরি করা সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল বছর ছোট-বড় চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৫৯০ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক হতাহত হয়েছে।

এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনা এক হাজার ২৪৯টি, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনা এক হাজার ৬৩৫টি, হিউম্যান হলার ২৭৬টি, কার-জিপ-মাইক্রোবাস ২৬২টি, অটোরিকশা এক হাজার ৭৪টি, মোটর সাইকেল এক হাজার ৪৭৫টি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ৩২২টি ও নছিমন-করিমনে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮২৪টি।

এসব দুর্ঘটনার মধ্যে পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা, মুখোমুখী সংঘর্ষ, খাদে পড়া ও চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা রয়েছে।

সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা ও রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াতের কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে সংগঠনটি।

বলা হয়েছে- ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। একইসঙ্গে টিভি-অনলাইন, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক সচেতনতামূলক বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং দেওয়া, চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিগত উন্নয়ন-আধুনিকায়ন, জাতীয় মহাসড়কে কমগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করার কথাও বলেছে সংগঠনটি।

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করে দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গৃহিত কর্মসূচি যথেষ্ট নয়।

“সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমেও সমন্বয় নেই। তাছাড়া দাতা সংস্থার অর্থায়নে যারা কার্যক্রম  চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের নেতৃত্ব জাহিরের প্রতিযোগিতায় থাকলেও সড়ক নিরাপত্তায় তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”

সড়ক পরিবহন আইনের ব্যাপক দুর্বলতা আছে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে মহামারী হিসেবে চিহ্নিত। অথচ আমাদের দেশে সড়ক পরিবহনের কার্যকর কোনো আইন নেই। আশা করছি এ বছর কার্যকর একটি আইন প্রণয়ন হবে।”

সড়ক পরিবহন দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হলেও আইনি দুর্বলতার কারণে এখাতে সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের প্রত্যেকটি সড়ক-মহাসড়ক ডিজিটাল নজরদারীতে নিয়ে আসা, ড্রাইভিং স্কুল করা ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারার সভাপতি ইকরাম আহম্মেদ, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ন কবির হিরু ও মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন অর রশিদ বক্তব্য দেন।