সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের মৃত্যু

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি সরকারের সময়ের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2017, 03:07 PM
Updated : 4 Nov 2017, 12:19 PM

তার ছেলে মিজানুর রহমান এ হাসান মনু বিশ্বাস জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আবদুর রহমান বিশ্বাস বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

ইউনাইটেড হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৮টা ২৭ মিনিটে উনাকে আনা হয়েছিল। তার আগেই তার মৃত্যু হয়।”

জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুর রহমান বিশ্বাসকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বঙ্গভবনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুর রহমান বিশ্বাস।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কয়েক মাস পর তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়। এর পর থেকে তিনি অনেকটা অন্তরালেই ছিলেন।    

বাংলাপিডিয়া লিখেছে, মুক্তিযুদ্ধকালে আবদুর রহমান বিশ্বাসের আনুগত্য ছিল পাকিস্তান সরকারের প্রতি।

আর বরিশালের মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে তাকে স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দেখার কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়ে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাবেক এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

আবদুর রহমান বিশ্বাসের মৃত্যুর খবরে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা হাসপাতালে ছুটে যান।

জয়নাল আবেদীন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মজিবর রহমান সারোয়ার, বিলকিস জাহান শিরিনও ছিলেন সেখানে।

আবদুর রহমান বিশ্বাসের সেজ ছেলে মনু বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মেজ ভাই এহসানুল কবির জামাল বিশ্বাস আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি শনিবার ফিরলে বাবার দাফন হবে।”

মনু জানান, শনিবার সকালে তার বাবার মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘর থেকে বের করে জন্মস্থান বরিশাল নেওয়া হবে।

সেখানে জেলা স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় জানাজা হবে। এরপর মরদেহ ঢাকায় এনে বেলা সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, বাদ যোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এবং আসরের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা হবে। বিকালেই বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বরিশালের শায়েস্তাবাদে আবদুর রহমান বিশ্বাসের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ার পর তার পেশা জীবনের শুরু হয়েছিল স্থানীয় সমবায় ব্যাংকে।

পরে ১৯৫০ এর দশকে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে বরিশাল বার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্টেও তিনি মামলা লড়েছেন।

আইয়ুব খানের শাসনামলে মুসলিম লীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবদুর রহমান বিশ্বাস রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন তিনি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালে বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান হন আবদুর রহমান বিশ্বাস। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসেন জাতীয় সংসদে।

১৯৭৯-৮০ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় পাটমন্ত্রী এবং জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আবদুর রহমান বিশ্বাস। সে সময় দলে তার পদ ছিল ভাইস চেয়ারম্যান।

এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসে। আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রথমে স্পিকার ও পরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান। 

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার মেয়াদের শেষ দিকে ১৯৯৬ সালের মে মাসে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ তখনকার সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসিমসহ তার অনুগত ১৫ সেনা কর্মকর্তার শাস্তির বিষয়টি ছিল দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

জেনারেল নাসিম রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকটি সেনা দলকে রাজধানীতে ডেকেছিলেন বলে সে সময় অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত আদালত গঠনের মাধ্যমে ওই সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সাত জনকে বরখাস্ত এবং আট জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আবদুর রহমান বিশ্বাস রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যান। তার আগেই তার নির্বাচনী আসন থেকে সংসদে আসেন তার ছেলে এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাস।

এমপি থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ এক বিয়ের দাওয়াতে খাবারের বিষক্রিয়ায় নাসিমের মৃত্যু হয়।

আবদুর রহমান বিশ্বাসের আট ছেলেমেয়ের বাকিরা হলেন- শামসুদ্দোজা কালাম বিশ্বাস, এহসানুল কবির জামাল বিশ্বাস, মিজানুর রহমান এ হাসান মনু বিশ্বাস, আঁখি বিশ্বাস, জামিরুল রহমান শিবলী বিশ্বাস, রাখি বিশ্বাস ও রোমেন বিশ্বাস রুবেল।

আব্দুর রহমান বিশ্বাসের স্ত্রী হোসনে আরা রহমান চলতি বছর ২৩ জুন মারা যান। তিনি ছিলেন বর্তমান পর্যটনমন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ফুফাতো বোন।