বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর শনিবার সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি তোলার পর প্রেক্ষাপটে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এক অনুষ্ঠানে একথা জানান মতিন খসরু।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণসহ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্তে তা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে,” বলেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী।
গত জুলাই মাসে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সংসদে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন দুই মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিচারপতি সিনহার ভাইয়ের নামে রাজউকের প্লট নেওয়ায় অনিয়মের কথা সংসদে বলেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথাও বলেছিলেন তিনি।
সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ব্যাংকে থেকে বেনামে বিচারপতি সিনহার অর্থ জমা রাখার কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পেয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারকরা।
এসব অভিযোগের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বিচারপতি দিতে পারেননি বলে তার সহকর্মীদের উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত ৩ অক্টোবর ‘অসুস্থতার’ কারণে তার ছুটিতে যাওয়ার খবর আইনমন্ত্রী প্রকাশ করলে তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
ছুটি নিয়ে শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার আগে বিচারপতি সিনহা বলেন, তিনি অসুস্থ নন। তবে সরকারের আচরণে বিব্রত হয়ে ছুটি নিয়েছেন।
মতিন খসরু বলেন, “প্রধান বিচারপতি নিজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অসুস্থতার কারণে ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন। আবার তিনিই মৌখিকভাবে বলছেন, আমি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ।
“আমরা কোন কথায় বিশ্বাস করব? লিখিত না মৌখিক?”
“তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। আবার কিছু মানুষের সামনে বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন নেই। তিনি নিজেই নিজের কথায় ঠিক থাকতে পারেন না,” বলেন মতিন খসরু।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের জবাব নিয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটি দিয়ে বিদেশ যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
মতিন খসরু বলেন, “আমরা চাই তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আবার দায়িত্ব পালন করুন।”
বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেয়াদের শেষ দিকে এসে জটিলতায় পড়লেন তিনি।