মিয়ানমারের ‘জবাবের অপেক্ষায়’ বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তির যে প্রস্তাব মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও তাদের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2017, 03:12 PM
Updated : 9 Oct 2017, 03:31 PM

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে চলতি মাসের শুরুতে ঢাকা সফরে এসে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে করা ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় রাখাইন থেকে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ মুসলমানদের যাচাইয়ের পর তাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী তার দেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বলেন, ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের এক সঙ্গে কাজ করার এই আগ্রহকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। কিন্তু যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা।

“রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদের অর্ধেক গ্রামই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও এখনও চলছে। সুতরাং কারা রাখাইনে বসবাস করতেন, তার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করা বাস্তবসম্মত হবে না।”  

এ কারণে মিয়ারমারের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করে তার খসড়া হস্তান্তর করা হয়। যাচাই প্রক্রিয়া ও প্রত্যাবাসন কীভাবে হওয়া উচিৎ, সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেখানে।  

“প্রত্যাবাসন প্রশ্নে ওই প্রস্তাবের বিষয়ে মিয়ানমারের জবাব এখনও বাংলাদেশ পায়নি।”

অস্ট্রেলিয়া, চীন, মিশর, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, রাশিয়া, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ভারত, নেদারল্যান্ডস, ভ্যাটিকান, ডেনমার্ক, স্পেন, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতরা পদ্মায় এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

তাদের সামনে রোহিঙ্গা সঙ্কটর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইন প্রদেশে দমন-পীড়ন এখনও বন্ধ হয়নি। এখনও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। 

জাতিসংঘের হিসাবে, এবারের দমন অভিযান শুরুর পর ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়েছে গত দশ দিনের মধ্যে।

মিয়ানমারের মন্ত্রীর সফরে দুই দেশ যে একটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে কথাও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের মন্ত্রী তাকে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন। ওই আমন্ত্রণ বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে।  

রোহিঙ্গা সঙ্কটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সেজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। 

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ২০ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মিয়ানমার সফরে যেতে পারেন। তিনি ঘুরে এলে তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া বাকি চার দেশ- ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও লাওসের রাষ্ট্রদূতরা শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন বলে জানান মাহমুদ আলী।