হাই কোর্টে আটকেছে বাংলাদেশ-ভারত রুটে বাস অপারেটরের টেন্ডার

ভাড়া নির্ধারণ না করেই বাংলাদেশ-ভারতের পাঁচ রুটে দুই বছরের জন্য বাস অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়া হাই কোর্টে আটকে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2017, 10:55 AM
Updated : 13 Sept 2017, 10:55 AM

এক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার ওই দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছে।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, সঙ্গে ছিলেন এ আর এম কামরুজ্জামান, অর্পণ চক্রবর্তী ও শুভজিত ব্যানার্জি। অন্যদিকে বিআরটিসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান।

এবিএম আলতাফ পরে সাংবাদিকদের বলেন, “পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের ১৫ ধারা অনুসরণ না করেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। তাই ওই টেন্ডার প্রক্রিয়ার ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাই কোর্ট। এখন এটা নিয়ে আর কোনো কার্যাক্রম চালানো যাবে না।”

রিট আবেদনকারী যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক বাস রুটে দুই দেশের সরকারের করা প্রটোকলের শর্ত অনুযায়ী ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে নাস্তাসহ ১১ ডলার (প্রায় ৯২০ টাকা) ভাড়া আদায়ের কথা থাকলেও সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিসহ সব বেসরকারি পরিবহন কোম্পানি ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

“ফলে এই রুটে প্রতিদিন যাতায়াতকারী প্রায় ৮০০০ যাত্রী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”

মোজাম্মেল বলেন, ওই বাস রুটটি জনপ্রিয় হওয়ায় আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-শিলং-গোয়াহাটি-ঢাকা রুট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এসব রুটে বাসের ভাড়া নির্ধারণ না করায় পরিবহন কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে।

এই পাঁচ রুটে বাস অপারেটর নিয়োগের জন্য গত ৪ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

ভাড়া নির্ধারণ না করে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি চলমান ভাড়া নৈরাজ্যকে আরও উস্কে দেবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত ১৩ জুলাই সরকারকে দুই দেশের প্রটোকল অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির আবেদন জানায়।

কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো ‘সদুত্তর না পেয়ে’ হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয় বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান।

ওই রিটের প্রথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুলাই রুল জারি করে হাই কোর্ট। ভাড়া নির্ধারণ না করে দুই বছরের জন্য বাস অপারেটর নিয়োগে দেওয়ার টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

একইসঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক বাস রুটে প্রটোকলের শর্ত লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের’ ব্যবস্থা চেয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি সরকারের কাছে যে আবেদন করেছিল, তা এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।  

ব্যারিস্টার আলতাফ হোসেন বলেন, হাই কোর্টের ওই আদেশের পর বিটিআরসি গত ২ অগাস্ট মোজাম্মেল হককে চিঠি দিয়ে আবেদন নিষ্পত্তি করার কথা জানায়।

এর মধ্যেই ৩০ অগাস্ট বিআরটিসি টেন্ডার ওপেনিং কমিটির সভা করে এবং ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের দুটি বাস নিয়ে মতিঝিল ডিপোতে হাজির থাকতে বলা হয়।

কিন্তু ভাড়া নির্ধারণ না করেই কর্তৃপক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ায় আদালতে আবেদন করেন মোজাম্মল হক। সেই আবেদনের শুনানি নিয়েই টেন্ডার প্রক্রিয়ার ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আদালত।