ঢাকায় কোরবানির বর্জ্য জমেছিল ২২ হাজার টন

রাজধানীতে এবার কোরবানির পশুর মোট ২২ হাজার টন বর্জ্য জমেছিল জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা অপসারণে সফল হওয়ার দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2017, 09:02 AM
Updated : 3 Sept 2017, 01:39 PM

ঈদের পরদিন রোববার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় সবার সহযোগিতায় রাজধানীর ৯০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।”

ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হয়ে বিদেশে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কাজের বিস্তারিত তুলে ধরেন সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণে কোরবানির পশুর হাট এবং কোরবানি করা পশুর ১৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ওই বর্জ্য সরাতে তিন হাজার ‘ট্রিপ’ দিতে হয়েছে সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলোর।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য জমেছিল আট হাজার ২৭০ টন; যা সরাতে ১ হাজার ৬৮৬টি ‘ট্রিপের’ প্রয়োজন হয়।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির সব বর্জ্য অপসারণে সফল হয়েছেন দাবি করে সাঈদ খোকন বলেন, “আমরা বলেছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে।”

রোববার ঢাকার আগারগাঁও শ্যামলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডিসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য অনেকাংশে সরানো হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় নতুন করে কোরবানি হওয়ায় নতুন বর্জ্য জমেছে।

রোববার রাজধানীর যেসব স্থানে পশু কোরবানি হচ্ছে, সেসব বর্জ্যও দিনের মধ্যে অপসারণ করা হবে বলে জানান মেয়র।

ঈদের আগে সিটি করপোরেশন বলেছিল, এবার ঢাকায় প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশুর বর্জ্য সরিয়ে নিতে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন।

যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে।

দুপুরে মেয়রের সংবাদ সম্মেলনের পর বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে প্রধান সড়কগুলোতে আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি এলাকায় গলির পাশে তখনও কোরবানির পশুর বর্জ্য পড়ে ছিল। তখনও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আবর্জনা এনে সিটি করপোরেশনের ভাগাড়ে ফেলছিলেন।

কুড়িল, জোয়ারসাহারা, বনানী, গুলশান ও বাড্ডার প্রধান সড়কগুলো ঘুরে রোববার বিকালে কোরবানির পশুর বর্জ্য দেখা যায়নি। তবে রামপুরা বনশ্রীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে, বিভিন্ন খালি প্লটে তখনও বর্জ্য পড়ে ছিল।

বেলা সাড়ে ৩টায় মেরাদিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানে করে আবর্জনা এনে রামপুরা-ডেমরা সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। আবর্জনার স্তূপ জমে আছে সেখানে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

একজন ভ্যানচালক জানান, সকাল থেকে এসব আবর্জনা সেখানে জড়ো করা হচ্ছে। বিকালে সিটি করপোরেশনের ট্রাক এসে তা সরিয়ে নেওয়ার কথা।

মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট থেকে বাঁশের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হলেও আবর্জনা রয়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতার কাজে থাকা একজন শ্রমিক বলেন, পুরো সাফ সুতর হেতে সপ্তাহখানেক লেগে যাবে।

বিকালে দক্ষিণ বনশ্রীর প্রধান সড়কেই আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। সেখানে দুই দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য রয়েছে বলে জানান ভ্যানচালক আজিজুর।

তিনি বলেন, ময়লার কন্টেইনার দিতে দেরি করায় আবর্জনা এনে রাস্তায় রেখেছেন তারা। ট্রাক না আসায় ময়লা নিতে দেরি হয়েছে।

“গতকাইল পর্যন্ত ঠিকমতই ময়লা গ্যাছে। কিন্তু আইজকা কন্টেইনার নেওয়ার ট্রাক নষ্ট, ময়লা নিতে দেরি হইতাছে।”

মাদারটেক, নন্দীপাড়া ঘুরেও বিভিন্ন স্থানে কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। বাসাবো কদমতলা আমান মসজিদের কাছে একটি ডাস্টবিনেও বিকালে ময়লা জমে ছিল। তবে অতীশ দীপঙ্কর সড়কের কোথাও আবর্জনা দেখা যায়নি।

শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠে অস্থায়ী হাটের বাঁশের খুঁটি সরানো হলেও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। হাটের গরু রাখা হয়েছিল রেলওয়ে কলোনির বিভিন্ন ভবনের সামনেও। সেসব আবর্জনাও পরিষ্কার করা হয়নি। তবে প্রধান সড়কের আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শাহজাহানপুরে পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারক করতে আসা সিটি করপোরেশনের একজন পরিদর্শক জানান, বৃষ্টি না হলে কোরবানির সব আবর্জনা সরাতে আরও দুদিন লাগবে। আর বৃষ্টি হলে সময় লাগবে আরও বেশি।

মোহাম্মদপুরের বসিলা হাটের ইজারাদার শাহ আলম হোসেন জীবন জানান, ঈদের দিনই সিটি করপোরেশনের লোকজন পশুর হাটের আবর্জনা সরিয়ে ফেলেছে। এখন হাটের বাঁশ সরানোর কাজ চলছে।

কোনো এলাকার বর্জ্য অপসারণে দেরি হলে সিটি করপোরেশনের হটলাইন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন মেয়র সাঈদ খোকন।

“আমাদের লোকজন সব সময় মাঠে আছে। কোথাও এরকম থাকলে আমাদের জানান, আবর্জনা সরানো হবে।”