নানির কাছে থাকতে গিয়ে ফেরেনি মায়ের কোলে

নানি-মামার সঙ্গে এক ঘরে ছিল ১০ বছরের শিশু জাহিদুল হাসান, ধসে পড়া পাহাড়ের মাটির নিচ থেকে ওই দুজনের লাশ উদ্ধার হলেও ছেলের খোঁজে পাঁচ দিন হন্যে হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরছেন মা নাসিমা আক্তার।

মিন্টু চৌধুরী রাঙামাটি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 05:39 PM
Updated : 17 June 2017, 06:41 PM

শনিবার রাঙামাটি সদরের বিএডিসি ভবন আশ্রয় কেন্দ্রে কথা হয় নাসিমার (২৬) সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাহাড় ধসের কয়েকদিন আগে সদরের ভেদভেদি লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন মুসলিম পাড়ায় নানির কাছে বেড়াতে এসেছিল জাহিদুল। এই বাড়িতে তার মা সুলতানা বেগম, ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী এবং ছোট দুই ভাই থাকতেন।

মঙ্গলবার সকালে এই ঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ার পর ফায়ার সার্ভিসর্কমীরা নাসিমার মা সুলতানা (৪৫) ও ভাই ইব্রাহীমের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও ছেলে জাহিদুলের সন্ধান দিতে পারেনি। ঘটনার সময় তারা তিনজন ওই ঘরে ছিলেন বলে নাসিমার ভাষ্য।

রাঙ্গামাটি সদরের বিএডিসি আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে নাসিমা আক্তার। ভেদভেদী লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন মুসলিম পাড়ায় পাহাড় ধসে নিখোঁজ তার দশ বছরের সন্তানের সন্ধান মেলেনি পাঁচদিনেও

কাঁদতে কাঁদতে এই মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন যে তাকে বাসায় নিয়ে গেলাম না! আমাদের সাথে থাকলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না।”

জাহিদুলের বাবা মোহাম্মদ পারভেজ পেশায় অটোরিকশা চালক।

নাসিমা জানান, তারাও আগে এই পাড়ায় ভাড়া ঘরে থাকতেন। এ এলাকায়ই কিছুটা জমি কিনে ঘর নতুন ঘর তৈরি করছিলেন। সেজন্য শহরের তবলছড়ি স্বর্ণটিলা এলাকায় বাসা ভাড়া নেন।

“আমার বাবার দ্বিতীয় সংসার হওয়ায় মা সুলতানা বেগম তিনভাইকে নিয়ে মুসলিম পাড়ার এই বাসায় থাকতেন।”

এই এলাকায় মূল সড়কের পাহাড় ধসে প্রায় ৫০ ফুট নিচের বসতিগুলো পুরোপুরি গুঁড়িয়ে গেছে। ওই পাহাড়ের ললে কাদামাটি থেকে কাউকে উদ্ধার করা একপ্রকার কঠিনই।  সেখানে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন চারজন।

এই এলাকায় মূল সড়কের পাহাড় ধসে প্রায় ৫০ ফুট নিচের বসতিগুলো পুরোপুরি গুঁড়িয়ে গেছে

দুর্ঘটনার চতুর্থ দিন শুক্রবার বিকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর শনিবার জুরাছড়ি উপজেলায় দুইজনের লাশ উদ্ধারের কথা জানানো হয়।

এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত দুইজনের নিখোঁজের কথা জানানো হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশু জাহিদুলও রয়েছে।

এখ নাসিমা তার সন্তানের খোঁজ চাইছেন যে কোনো উপায়ে। এজন্য প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন তিনি।