রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় ২০১২ সালের এক রাতে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নিহত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে শনিবার। এই সময়ে মামলার অগ্রগতি বলতে অপর এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর বাইরে তিনজন গ্রেপ্তার হলেও তাদের দুজন জামিনে আছেন।
পুলিশ থেকে ডিবি, ডিবি থেকে র্যাবের হাতে তদন্ত ভার গেলেও বিচার না পাওয়ায় মামলাটি ‘পরিকল্পিতভাবে ধামাচাপা’ দেওয়া হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিহতদের এক স্বজন।
রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমান এই মামলার বাদী।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা খুব আন্তরিক। তারা চেষ্টা করছেন। স্যারেরা খুব আন্তরিক। কাজ চলছে। কিছু হলে তারা আমাদের জানাবে।”
“একজন অভিভাবকের কাছে এমন দায়সারা উত্তর! তিনি তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিভাবক, তাই নয় কী?”
হত্যাকাণ্ডটি ‘পরিকল্পিতভাবে ধামাচাপা’ দেওয়ার বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকার কথা বললেন রোমান।
“এটাই আমাদের মনে হয়। এছাড়া আর কোনো অপশন নাই।… কোনো বিচারইতো পেলাম না। বিচারেরতো কোনো কিছুই দেখলাম না। তদন্তের কোনো আপডেট দেখলাম না।
“আমার ধারণা, দেড় থেকে দুই বছর পর আর কিছুই থাকবে না এই মামলার।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে সাগর-রুনি হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ছুটে যান তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর সাহারার মন্ত্রিত্ব শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলে যান মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তার কাছ থেকেও বিচার পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
মামলাটি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের মহামান্য হাই কোর্ট থেকে এটা র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী তদন্ত করছে এবং তার অগ্রগতি আদালতে সময় সময় জানাচ্ছে।
“আমি এখনও আশাবাদী- যে কোনো সময় র্যাব এটা উদঘাটন করবে এবং আপনাদের জানাতে পারব।”
মামলাটি প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব পান শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক এসআই জহুরুল ইসলাম, তার কাছ থেকে যায় গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলমের হাতে। ৬২ দিন পর ডিবি আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করলে ২০১২ সালের এপ্রিলে তদন্তের দায়িত্বে আসে র্যাব।
র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জাফর উল্লাহর হাত ঘুরে বর্তমানে বাহিনীর সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ মামলাটি তদন্ত করছেন।
সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে তদন্ত কর্মকর্তা তাদের বাসায় যান বলে জানান রোমান।
“ওই সব প্রতিবেদনে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনাস্থল থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন খোয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “হারানো দুটি মোবাইল সেট কেউ ব্যবহার করছে না। যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে বের করতে পারব। আমরা তৎপর আছি।”
সাগর-রুনি যে বাড়িতে থাকতেন ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির এবং বনানী থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মিন্টু ওরফে বার গিরা মিন্টু ওরফে মাসুম, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও কামরুল হাসান অরুণ এই মামলায় কারাগারে আছেন। হত্যা ও ডাকাতি মামলার ওই পাঁচ আসামিকে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদের বাইরে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান এবং সাগর-রুনির বাড়ির আরেক দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাই কোর্টের জামিনে মুক্ত আছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ দিন ছিল বুধবার। ৪৭তম বারে প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে অগ্রগতি জানানোর আদেশ দেন।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২১ মার্চ নতুন দিন রেখেছেন বিচারক।
প্রতিবেদন দিতে বার বার সময় নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আদালতে কখনও সময় চাই না। আমাদের কাজের অগ্রগতি আদালতে তুলে ধরা হলে আদালতই আমাদের সময় দেন।”