ডেসটিনির দুই মামলায় হারুন ও রফিকুল আমীনের বিচার শুরু

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুই মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৫১ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 03:02 PM
Updated : 24 August 2016, 03:08 PM

চার বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ দুই মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ডিএমসিএসএল) ও ডেসটিনি ট্রি প্ল‌্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাতের করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বুধবার দুই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ‌্য শুরুর জন‌্য ২৭ সেপেটম্বর দিন ঠিক করে দেন।

সেই সঙ্গে মামলা দুটির নথিপত্র ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন তিনি। ওই আদালতেই এ মামলার সাক্ষ‌্য ও জেরা চলবে বলে দুদকের অন্যতম আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম জানান।

ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন

অভিযোগ গঠনের শুনানির জন‌্য এ দুই মামলায় কারাগারে থাকা ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, এমডি রফিকুল আমিন, পরিচালক দিদারুল আলম, শফিউল ইসলাম, জিয়াউল হক মোল্লা ও জেসমিন আক্তারকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা হারুন-অর-রশিদও আদালতে হাজির ছিলেন। তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার চান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দুটি করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ১৯ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ৪৬ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

আর মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রোজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাত করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।

দুই মামলার পলাতক আসামিরা হলেন- ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মো. আকবর হোসেন সুমন, মো. সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. শফিকুল হক।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে টাকা পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড।