কমিটি নয়, শিক্ষক বাছাই করবে এনটিআরসিএ: নাহিদ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের ব‌্যবস্থাপনা কমিটির কোনো অধিকার নেই জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাকে ঠিক করে দিবে তাকেই নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2016, 10:50 AM
Updated : 13 August 2016, 12:44 PM

শনিবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত‌্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) আয়োজিত ১৩তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ঢাকা কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে নিয়োগে অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক হতে চাইলে অবশ্যই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ থাকতে হয়।

নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে গত বছরের ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে, যার ফলে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব হয়।

নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল-কলেজে মেধার ভিত্তিতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ আছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষক নিয়োগ দেই সেটা স্বচ্ছ হয় না কিংবা সেটা ধরতে পারেন, সঠিকভাবে হয় না।

“যার ফলে আমরা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারি না, আবার করতে পারলেও আমরা তাকে ঠিকভাবে নিয়োগ দিতে পারি না।”

দেশে ৩৭ হাজার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেটা প্রযোজ্য না হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন‌্য প্রযোজ্য।

“সুতরাং বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা যদি উন্নতমানের নিয়োগ দিতে পারি- এটা আমাদের জন্য পজেটিভ হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমরা এখান (এনটিআরসিএ) থেকেই নিয়োগ দিব এবং পরীক্ষা নেওয়া হবে।”

প্রায় ছয় লাখ পরীক্ষার্থীর মধ‌্যে মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বাছাইয়ে এক লাখ ৪৭ হাজার জন উত্তীর্ণ হন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাদের মধ‌্যে শুক্রবার পরীক্ষা দেন স্কুল পর্যায়ের ৯০ হাজার ৯৪৪ জন এবং মাদ্রাসা ও টেকনিক্যালের ৬২০ জন। শনিবার ৫৫ হাজার ৬৯৮ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন কলেজ শিক্ষক হওয়া জন্য।

“এই পরীক্ষায় যারা ভালো করবেন তাদের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হবে। নিয়ম করেছি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনে খাতা দেখবেন এবং পরের ১৫ দিন প্রধান পরীক্ষকের কাছে খাতা পৌঁছবেন। তিনি খাতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জমা দিবেন। সেখন থেকে বাছাই করে মৌখিক পরীক্ষা নিব।”

অক্টোবরের শেষদিকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “মৌখিক পরীক্ষা শেষ করার ৩০ দিনের মধ্যে ফল দিতে পারব। এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতে অক্টোবর শেষ দিক পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”

সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে চাহিদা নেওয়ার কথা জানিয়ে সে অনুসারে ছয় মাসে শূন‌্য পদে শিক্ষক নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে থানা খালি সেখানকার স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হবে। না থাকলে জেলা পর্যায় এবং তারপর বিভাগীয় পর্যায় থেকে।

তারপরও পাওয়া না গেলে যেখান থেকে পাওয়া যায় সেখান থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে মূল শহর বা বিভাগী শহরে জাতীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে; তার বাড়ি সেখানে কি না তা দেখা হবে না।

এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্তকেই নিয়োগ দিতে হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, “শিক্ষক নিয়োগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা কারও কোনো হস্তক্ষেপ হবে না। তাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার বা সুযোগ নাই। আমরা একজনকে ঠিক করে দিব তাকে নিতে হবে।”

নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরোটাই অনলাইনে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুতরাং কারও হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকবে না, কোনো সুযোগ নেই। কোনো ধরনের ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও সুবিধা নেওয়ারও সুযোগ নেই।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের মতো চাহিদা আছে, আপাতত তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। এটা বাড়তেও পারে। যেহেতু আমরা ভালো শিক্ষক বাছাই করছি, প্রচুর শিক্ষক হাতে আছে- চাহিদা হলেই নিয়োগ দেওয়া হবে।”

স্কুল-কলেজের খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী শিক্ষকদের ব‌্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একটা সময় দিয়ে পিরিওডিক‌্যালি পরীক্ষা নিব, বিজ্ঞাপন দিব, চাহিদা চাইব। যিনি এর আওতায় পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক হবেন না, তিনি তো আমাদের খাতার শিক্ষক হিসেবে গণ্য হবেন না।”