শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে

জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পৌঁছেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2015, 07:20 AM
Updated : 27 Sept 2015, 05:40 PM

এ অধিবেশন চলাকালে টেকসই উন্নয়নের নতুন লক্ষ্য ঠিক করতে এক সম্মেলনে মিলিত হবেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রী লন্ডন হয়ে বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার পর নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জিয়াউদ্দিন তাকে স্বাগত জানান।

বিমানবন্দর থেকে জাতিসংঘের প্রটোকলে বিশেষ বাহনে চড়ে ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়া হোটেলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রদূত মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেন সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে ১ অক্টোবর পর্যন্ত এই হোটেলেই অবস্থান করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার সঙ্গে রয়েছেন।

এ সফরে ৬০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গওহর রিজভী, মশিউর রহমান এবং প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত মোমেন জানান, বাংলাদেশে শুক্রবার ঈদ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন বৃহস্পতিবার।  

“ঈদের সন্ধ্যায় লাগার্ডিয়া ম্যারিয়ট  হোটেলে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। কেবল আমন্ত্রিতরাই এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।”

দীর্ঘ যাত্রার পরও জেএফকে বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অনেকটাই প্রফুল্ল মেজাজে দেখা যায়। অভ্যর্থনা জানাতে আসা সবার সঙ্গে তিনি হাসিমুখে কথা বলেন।

বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে রওনা হওয়ার পর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে লন্ডনে নামার পর যাত্রাবিরতির সময় কয়েকটি বাংলা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। 

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মো. আবদুল হান্নান হিথ্রোতে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর আগেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজারখানেক নেতাকর্মী জেএফকে বিমানবন্দরের ৭ নম্বর টার্মিনালের বাইরে জড়ো হয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।  

নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের বাইরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে প্রবাসী আওয়ামী লীগকর্মীদের শ্লোগান।

নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রবাসী বিএনপিকর্মীদের বিক্ষোভ।

একই সময়ে গাড়ি রাখার জায়গায় জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকশ কর্মী সমর্থককে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

কাছাকাছি দুই দলের অবস্থানের কারণে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলেও পুলিশের উপস্থিতিতে কোনো গোলযোগ সেখানে ঘটেনি।

১১ দিনের এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সম্মেলনে ব্যস্ত সময় কাটবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। ১৫০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপস্থিতিতে এসডিজি সম্মেলনের শেষ দিন ২৭ সেপ্টেম্বর বক্তব্য দেবেন তিনি।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে ‘শান্তিরক্ষা’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ওই অধিবেশনের কো-চেয়ার থাকবেন তিনি।

নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অফ দি আর্থ’ এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) পদক তুলে দেওয়া হবে শেখ হাসিনার হাতে।

৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেবেন। এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ২৭ সেপ্টেম্বর লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের এক বৈঠকে অংশ নেবেন।

আইএস জঙ্গিদের সহিংসতা-উগ্রপন্থা দমন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আয়োজনে আরেকটি সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

২৯ সেপ্টেম্বর ‘এমডিজি থেকে এসডিজিতে যাওয়া: বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি থাকবেন। বাংলাদেশের আয়োজনে ওই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক একটি ফোরামেও শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।

শেখ হাসিনার নিউ ইয়র্ক অবস্থানকালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করারও কথা রয়েছে।

আগামী ১ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক থেকে রওনা হয়ে লন্ডনে একদিন অবস্থান করে ৩ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে তিনি ঢাকা পৌঁছাবেন।