অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শনাক্তে শুমারি এ মাসেই

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের শুমারি চলতি মাসেই শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকমঈনুল চৌধুরী, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2015, 01:06 PM
Updated : 10 June 2016, 06:28 PM

কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে- এমন ধারণার মধ্যে প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশের ছয় জেলায়।

সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও উপকূলীয় পটুয়াখালীতে এই শুমারি পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের মার্চ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

‘অনিবন্ধিত মিয়ানমান থেকে আগত নাগরিক শুমারি’ শীর্ষক এই প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্প শুরুর পাঁচ মাসের মধ্যে প্রাথমিক কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। গত বুধবার প্রকল্পের অর্থছাড়ে পরিকল্পনা কমিশনের অনাপত্তি মিলেছে। বরাদ্দকৃত অর্থ হাতে পেলে কেনাকাটা শেষে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে।”

তিনি বলেন, “স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে যাতে রোহিঙ্গা নাগরিকরা নিবন্ধিত হন, তারা শুমারিতে তথ্য দেয় সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে।”

প্রথমবারের মতো এ কাজে সহায়তার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে ন্যাশনাল টাস্কফোর্স কমিটি রয়েছে। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে রোহিঙ্গা পরিচিতি দিতে অনিচ্ছুকদের উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আর অনিবন্ধিতরা এ শুমারির আওতায় এলে সরকারি-বেসরকারি সুবিধা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হবে।

নাগরিকের ছবি, বাংলাদেশে অবস্থান, এর আগে মিয়ানমারে অবস্থান, অনুপ্রবেশের কারণ, আর্থসামাজিক অবস্থানসহ বেশ কিছু তথ্য সন্নিবেশ করা হবে অনিবন্ধিতদের তথ্যভাণ্ডারে।

২০১৩ সালে গত ৯ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার শরণার্থী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের বিষয়ে জাতীয় কৌশলপত্র’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এরই ধারবাহিকতায় সর্বশেষ গত ২৬ জুন একনেক সভায়  অনিবন্ধিতদের শুমারির প্রকল্পের জন্য অর্থ অনুমোদন করা হয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।

এর বাইরে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা গণনার কাজ শুরু করেছে। গণনার পর এই সংখ্যা ৩৩ হাজারের মতো হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তালিকা করে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা জানার পরই তাদের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশের চলমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির প্রবণতায় অনিবন্ধিতদের তথ্যও কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন প্রকল্প ও ইসি কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের আলাদা একটি ডাটাবেজ তৈরির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, ইউএনএইচসিআর বা অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করা যায় সে কর্মকৌশল তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।”

অনিবন্ধিতদের শুমারি প্রকল্পও ইসির প্রস্তাবিত তথ্যভাণ্ডারের জন্য সহায়ক হবে বলে মত দেন এই কর্মকর্তা।