রোহিঙ্গা সংকটের মৌলিক জায়গা নিয়ে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত।
Published : 26 Aug 2022, 12:15 AM
নিজেদের মাটিতে ফিরতে শরণার্থীদের প্রয়োজন জানা এবং উদ্বেগ কমাতে প্রত্যাবাসনের আলোচনায় রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নয়েলিন হেইজার।
মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন পরামর্শ আসে তার কাছ থেকে।
প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের মৌলিক জায়গা নিয়ে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানান হেইজার।
তিনি বলেন, ফেরানোর আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাদের প্রয়োজন ও উদ্বেগের কথা শোনা, বিবেচনায় নেওয়া এবং সেগুলো গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা যায়।
“যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে তারা এক্ষেত্রে সরাসরি ও কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা বলেছে।”
বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের বিশেষ এই দূত।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক ও আলোচনায় যোগ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: প্রত্যাবাসনের পথ নির্দেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।
কক্সবাজারে ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হেইজার বলেন, “নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা তারা বারবারই বলেছে। আর তাদের বার্তা ছিল খুবই স্পষ্ট- যাতে তারা নিজ ঘরে ফিরতে পারে, চলাফেরা এবং নাগরিকত্ব পায়।”
নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা তাদের মুখ থেকে শোনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আসিয়ানসহ আঞ্চলিক জোটগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, তাদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে কয়েক প্রজন্ম এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“তবে, এটা মিয়ানমারেরই দায়িত্ব রোহিঙ্গাসহ সব নির্যাতিত মানুষের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সহায়কা পরিবেশ তৈরি করা।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মিয়ানমার সরকার দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
“কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতি না রাখার মনোভাবের ফলে পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরানো সম্ভব হয়নি।”
প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে দৃশ্যমান উদ্যোগ ও প্রকল্প নিতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের গুরুত্বের কথা তুলে অনুষ্ঠানে মার্কিন দূতাবাসের আঞ্চলিক শরণার্থী সমন্বয়কারী ম্যাক্যানজি রোও বলেন, “আমাদের দিক থেকে বার্মার বর্তমান পরিস্থিতি নিরসনে কাজ করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই জরুরি পরিস্থিতির সহায়তা কার্যক্রমের পরিবর্তে এখন আরও টেকসই ব্যবস্থায় যেতে হবে।
“এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের আলোচনার বর্তমান ধরন অবশ্যই পরিবর্তন করে গঠনমূলক আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।”
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করে ত্রিপক্ষীয় একটি উদ্যোগ নিয়েছে চীন। ভারত ও জাপানের মত দেশও এমন উদ্যোগ নিতে পারে।
ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, “প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। তৃতীয় দেশে শরণার্থীদের স্থানান্তর একটি স্থায়ী সমাধান। এটা শরণার্থীদের চাপ আন্তর্জাতিকভাবে ভাগাভাগি করার সুযোগ।
“এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাপান পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন পর্যন্ত এ স্কিমের আওতায় রোহিঙ্গাসহ ৫৪ পরিবার ও দুশ লোককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আরও বেশি রোহিঙ্গাকে জাপানে স্থানান্তরের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে পারি,“ যোগ করেন তিনি।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ফন লিউভেন বক্তব্য দেন।