আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট পার্টি’ আখ্যা দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “এত দিন সীমান্তে হত্যা হয়েছে কিন্তু বিজিবিকে ফ্ল্যাগ মিটিং (পতাকা বৈঠক) ছাড়া আর কিছুই করতে দেওয়া হয়নি।”
Published : 13 Aug 2024, 07:04 PM
পুলিশ, র্যাব, বিজিবির মতো বাহিনীগুলোকে গত ১৫ বছরের ক্ষমতাসীনরা দানব বানিয়েছে বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না, সে যত বড়ই হোক।
আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট পার্টি’ আখ্যা দিয়ে এই উপদেষ্টা বলেছেন, এত দিন সীমান্তে হত্যা হয়েছে কিন্তু বিজিবিকে ফ্ল্যাগ মিটিং (পতাকা বৈঠক) ছাড়া আর কিছুই করতে দেওয়া হয়নি। এসব দিন শেষ হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘাতে আহত বিজিবি সদস্যদের দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে পিলখানায় বর্ডার গার্ড হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
এ সময় পুলিশের আরও কিছু কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির ইঙ্গিতও দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যেটুকু আমি শুনলাম, ১৫ বছর এই ফোর্সগুলোকে দানব বানিয়েছে। যারা বানিয়েছে আমি তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাব। তারা কত কত লোক মেরেছে, প্রত্যেকটি ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে। বিজিবির মত একটা ফোর্সকে পীঠ দেখাতে বলেছে বর্ডারে। বর্ডারে আমাদের লোক মরে আর বিজিবি ফ্ল্যাগ মিটিং করতে বাধ্য হয়।
“যতদূর আমার এখানে বলার আছে, দেশবাসী আরও বলবে, পীঠ দেখাবেন না। যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের বর্ডারের মধ্যে ঢুকে মারে আর আমরা বলি ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে। সব ঠিক হয়ে গেছে বা আমি জানি না। দ্যাট ডেজ আর ওভার। থ্যাংক্স গড যে, সেনাবাহিনীকে আমরা অনেকভাবে রেস্ট্রিক্ট করেছি।”
কথা বলতে বলতে উত্তেজনায় ডান হাত দিয়ে ডায়াসে কিল মারছিলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “এগুলো ন্যশনাল ফোর্স। এগুলো কারও পার্সোনাল ফোর্স না। আই উইল ট্রাই টু ব্রিং দেম অন টু দ্যা জাস্টিস। দেশে এবং দেশের বাইরে। সে যত বড়ই হোক। আমার হাতে যদি পড়ে সোজা জেলে পাঠিয়ে দেব।
“আমরা ইতিমধ্যে কিছু অ্যাকশনে গিয়েছি পুলিশের মধ্যে, যারা পুলিশকে দানব বানিয়েছে। আপনারা মনে করবেন না যে আমি শুধু আপনাদের সঙ্গে পেপ টক (উৎসাহমূলক কথা) করি।”
আওয়ামী লীগকে `ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “দলটি ফ্যাসিস্ট পার্টির চেয়েও খারাপ। ফ্যাসিস্টরা যা করে তারা সেটা করে গেছে। মিথ্যা প্রচার এবং সেভাবে দেশকে তৈরি করা। ”
পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “একটা সরকারি প্রসেস আছে। এখন তো আর ওদের মতো না যে, বের করে দিলাম। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের কিছু সুপারিশ চলে গিয়েছে। আমি নাম বলব না। তারপরে তারা উন্মুক্ত থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। ”
“আমি আরেকটা কথা বলি। আমার অ্যাসিওরেন্স (নিশ্চয়তা) পেয়ে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তারা এ-ও বলেছে, ‘স্যার আমরা লজ্জিত’। আমার সাথে কয়দিন পুলিশের লম্বা মিটিং হয়েছে। ওই যে যাদের চ্যুত (চাকরিচ্যুত) করেছে। কাল (সোমবার) রাতে যমুনার (অতিথি ভবন) সামনে দুই হাজার পুলিশের মুখোমুখি হয়েছি আমি। আমি বলেছি যে, এটা হবে।”
যারা আগে দায়িত্বে ছিলেন- ছাত্ররা তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না; এমন তথ্যের প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমি ছাত্রদের বলি পুলিশ খুবই অনুতপ্ত। এদেরকে দানব বানানো হয়েছে। আমি আবারও বলি, আমরা তাদের ছাড়ব না। তবে সরকারি একটা প্রসেস আছে। একটু ধৈর্য্য ধরেন। এগুলো এভাবে টপটপ করে করা যায় না। তারপরে আবার দেখবেন যে, তিন বছর পর সে আবার চলে আসছে চাকরি নিয়ে।”
এর মধ্যেই মঙ্গলবার পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও রংপুর মেট্রোলিটন পুলিশের কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পুলিশের এসবি ও সিআইডি প্রধানসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদলের খবর এসেছে।
১৫ অগাস্ট ঘিরে কী হচ্ছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “১৫ অগাস্ট নিয়ে আজকে (মঙ্গলবার) বিকালে আমি বসব। যেটাই হয় হেভি প্রেজেন্স অব পুলিশ। যাতে কেউ কোনো গণ্ডগোল করতে না পারে।”
হুকুমের আসামি বের করার চেষ্টা করছেন জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “তাদের সবার লিস্ট আমাদের কাছে আছে। দুই-এক দিনের মধ্যে অ্যাকশন। আশা করি আজ ও কালকের মধ্যে আপনারা খবর জেনে যাবেন।
“আপনি জানেন পুলিশ আমাকে বলেছে, এই ইউনিফরম পরে তারা এক দিনের জন্যও বের হতে চান না। আমি বলেছি নতুন ইউনিফরম করতে তো সময় লাগবে। আমি ছাত্রদের বলি আপনারা ডিজাইন নিয়ে আসুন ইউনিফরম ও ব্যাজের। আমরা এগুলো চেঞ্জ করতে চাই।”
অস্ত্র জমার পরিমাণ কেমন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “নিষিদ্ধ বোর (অস্ত্র) যার কাছে আছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে আপনারা জমা দেন। আর যদি ওই অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়েন তাহলে দুই রকমের মামলা হতে পারে। এক নিষিদ্ধ অস্ত্র ছিনতাইয়ের আর দ্বিতীয়ত অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে।”
পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠার ভাবনার কথা জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ভবিষ্যতে পুলিশ যাতে মানবিক হয় সেজন্য আমরা একটা পুলিশ কমিশন করছি। পুলিশ নিজেই বলেছে তারা পুলিশ কমিশনের আন্ডারে থাকতে চায় কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের আন্ডারে নয়।”
একটি টিভি চ্যানেলে আগুন লাগানোর প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এই যে টিভিতে আগুন লাগিয়েছে। এখন বলে ভেতর থেকে লাগিয়েছে। এখনও জানা গেল না কেন ভেতর থেকে লাগিয়েছে।
এ সময় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক ঘটনায় বিজিবির তিনজন সদস্য নিহত হন, যাদের মধ্যে দুজন প্রেষণে র্যাবে কর্মরত ছিলেন। আহত হয়েছেন ১৩০ জন বিজিবি সদস্য।
আন্দোলনে বিজিবি পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন, তাদের মধ্যে তিনজন এখন বর্ডার গার্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
দাবি পূরণের আশ্বাসে আনসার সদস্যদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে আনসারদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবির বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছেন আনসার বাহিনীর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ ও আনসার সমন্বয়রা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দাবি পূরণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আনসার সদস্যরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সাজ্জাদ মাহমুদ সাধারণ আনসারদের পাঁচ সমন্বয়ককে সঙ্গে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি হস্তান্তর করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। অন্যান্য দাবি পূরণের জন্য মহাপরিচালককেও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।