রায়েরবাগ থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে গুলিস্তান পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এখানকার যানবাহনের সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বেশি।
Published : 05 Oct 2024, 04:11 PM
বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট পুরনো নয়। কিন্তু পথে পথে জমে থাকা পানি, ভাঙাচোরা পথ আর এলোপাতাড়ি চলাচলের কারণে অপ্রতুল গণপরিবহনও কোথাও কোথাও যানজট ভোগান্তির মাত্রা বাড়ায়।
শনিবারও সেই চিত্র দেখা গেছে ঢাকায়।
বেসরকারি এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন মতিঝিলে যেতে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সকাল ৮টায়। দোলাইরপাড় হয়ে যাত্রাবাড়ী মোড়ে এসে তিনি গাবতলীগামী যে বাসে উঠেছিলেন, টিকাটুলি পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতেই সেটির লেগে যায় পুরো এক ঘণ্টা।
পায়ে হাঁটলেও এতটুকু পথ পাড়ি দিতে সময় লাগত আধা ঘণ্টারও কম। বাইরে বৃষ্টি, পুরো সড়ক জুড়ে বাস, মোটরসাইকেল রিক্সাসহ বিভিন্ন ধরনের বাহন। ফুটপাতেও পানির কারণে হাঁটা সম্ভব নয়। অগত্যা বাসের মধ্যেই তাকে বসে থাকতে হয়েছে মতিঝিল পৌঁছানো পর্যন্ত।
বৃষ্টিতে সড়ক জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়ে একই পরিস্থিতি তৈরি হয় মাথার উপরে থাকা যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তানমুখী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও।
রায়েরবাগ থেকে এই ফ্লাইওভারে গুলিস্তান পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানবাহনের সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বেশি।
সকাল ৯টায় রওনা দিয়ে গুলিস্তান টোলপ্লাজার আগেই নেমে বাকিটা পথ পায়ে হেঁটে গিয়ে আরেক বাস ধরতে হয়েছে নারী উদ্যোক্তা নুসরাত জাহানকে। সাধারণ সময়ে ১৫ মিনিটের এ পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছে বৃষ্টির কারণে।
আশ্বিনের শেষভাগে এসে যে বৃষ্টি ঝরছে, তার যেন বিরাম নেই। কখনো বড় বড় ফোটায়, কখনো আবার ঝিরঝিরে, কিন্তু বর্ষণ চলছেই।
শনিবারও বৃষ্টি নিয়েই দিন শুরু হয়েছে রাজধানীর মানুষের। বিকেলের দিক থেকে ঢাকায় এবং রোববার থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা জমে থাকা পানি দেখা গেছে। পথে পানি জমায় চলার পথ হয়েছে সরু। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় গণপরিবহন ‘ইচ্ছেমত চলাচল করতে গিয়ে’ তৈরি হয়েছে যানজটও।
রিয়াজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণত শনিবার কাজ থাকে না। সকালে একটি ফাইলের কাজ জরুরিভিত্তিতে করে দিতে অফিসে যেতে হচ্ছে। একে তো বৃষ্টি, তারওপর এই যানজট। কষ্ট দুই দিকেই।’’
একটানা বৃষ্টিতে টিকাটুলি থেকে মতিঝিলের জীবন বীমা ভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পানি জমলেও শাপলা চত্বরে জলজট হয়নি।
পানির নিচে চলে যাওয়া সড়কের অংশ এড়িয়ে ডান পাশ ধরে ধীরে গতিতে চলাচল করেছে সব যানবাহন।
মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন তার স্থাপনে মতিঝিল অংশের কাজ এখনো চলছে। পনির নিচে থাকা সড়কের কোন জায়গায় গর্ত তা বুঝতে কষ্ট হয় চালকদেরও। ফলে রিকশাগুলোও চলেছে রাস্তার ডানপাশ ধরে। এতেও বাসের গতি কমেছে বলে জানান গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী গাবতলী লিংক পরিবহনের চালক রহমত উল্ল্যাহ।
তিনি বলেন, “পানি জমলে তো বুঝা যায় না রাস্তার কোন জায়গায় গর্ত, কোন জায়গায় ভালা। দেহেন রিকশাও ডাইন সাইডে আছে। আমার সামনে রিকশা চলতাছে, ও না সরলে আমি জোরে যাই কেমনে?”
একইভাবে বৃষ্টির কারণে সড়কের শৃঙ্খলাও হারিয়েছে বিভিন্ন মোড়ে। রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের গুলিস্তান পয়েন্টে গণপরিবহনের বড় অংশের গন্তব্য শেষ হয়। সেখানে গাড়ি ঘুরিয়ে যাত্রী তুলতে শুরু করে চিটাগাং রোড, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, ডেমরা রুটের বাসগুলো।
গুলিস্তান পয়েন্টে নামার পরে যাত্রীর চাপ না থাকলে বাসগুলো বাম লেন ধরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। শনিবার ফিরতি যাত্রী না পেয়ে বাসগুলো এভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। কিছু গণপরিবহন গাদাগাদি করে হাঁকডাক করতে থাকে যাত্রী তুলতে।
এতে সড়কের সিংহভাগই তাদের দখলে চলে যায়। ফাঁকা অংশ দিয়ে একটি একটি করে গাড়ি পার হয় টোলপ্লাজা দিয়ে।
ফ্লাইওভারের ওপরে তিন সারিতে চলা যানবাহন টোলপ্লাজায় নামার সময়ে একটি সারিতে পরিণত হয়েছে এজন্য। গাড়ির গতি কমে যাওয়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হতে হতে চলে গেছে রায়েরবাগ পর্যন্ত।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থাকা অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হওয়া নুসরাত জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো নারী উদ্যোক্তা। বৃষ্টি দেখে যেতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু একটা পার্শেল বুকিংয়ে দিতে হবে ঢাকার বাইরের গ্রাহকের জন্য। কাস্টমার হারানো যাবে না। নিজের কাজ, তাই উপায় নেই বের হওয়া ছাড়া।’’
রাজধানীর প্রবেশ পথে গাড়ির জটলা থাকলেও নগরের ভেতরে গণপরিবহনের চাপ খুব একটা দেখা যায়নি। বৃষ্টিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ায় যাত্রীদের চাপও ছিল না।
পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণী, মহাখালীতে গণপরিবহনের ছিল সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক কম। ছিল না যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় নামা বাসের বেপরোয়া চলাচল ও হর্নের শব্দও।
এসব সড়কে সিগন্যালে অনায়াসে গণপরিবহন পার হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা রুটে চলাচলকারী বৈশাখি পরিবহনের সহকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, “কী যে বৃষ্টি, যাত্রী নাই। শনিবার হইলেও আমার গাড়িতে প্যাসেঞ্জার ভরপুর থাহে। এহন কোনোমতে সিট ভরছে। তাও পিছনের দুই লাইন খালি। যহন যেমন যায়, তাই মাইনা লই।”
এদিন ভারি বৃষ্টির ঈঙ্গিত আছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় আগের মতোই অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিকেলের দিক থেকেই ঢাকায় বৃষ্টিপাত কমবে। কাল থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাত কমতে পারে।
“তবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে কয়েকদিনের মতো ভারি না হলেও এ মাসের ১২ তারিখ পর্যন্তই সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হবে। এরপর বৃষ্টিপাত কমতে পারে।”
ভারি বৃষ্টির সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে বলে সতর্ক করা হয়েছে ওই বার্তায়।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।