রানা প্লাজা ধস: হত্যা মামলায় আরও ৩ জনের সাক্ষ্য

মোট ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2024, 02:48 PM
Updated : 11 Jan 2024, 02:48 PM

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন।

বিচারক সৈয়দা মিনহাজ উম মুনীরা আগামী ২১ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যের তারিখ রেখেছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এ মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৫৯৪।  বৃহস্পতিবারের তিনজনসহ ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

এদিন সাক্ষ্য দেন ওলিউর হাওলাদার, মাহমুদুল ইসলাম ও ঝন্টু খান। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রত্যেকে এক হাজার টাকা রাহা (যাতায়াত ও দুপুরের খাবার) খরচ দেওয়া হয় ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডের তহবিল থেকে।

জবানবন্দি শেষে তাদেরকে আসামিদের আইনজীবীরা জেরা করেন বলে জানান পেশকার আমিনুল ইসলাম।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে প্রায় ছয় বছর স্থগিত থাকার পর ২০২২ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তবে ইমারত বিধি না মেনে ভবন তৈরির মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে।

রানা প্লাজা ধসের পরপর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও এ দুটিই মূল মামলা। দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলে অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন।

মামলার মূল আসামি সোহেল রানা গত বছরের ৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দেওয়ায় এখনো মুক্তি পাননি তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দারের ভাষ্য, অবকাশের কারণে ডিসেম্বরে আদালত বসেনি। তার আগে নভেম্বরের ১৬, ১৭ ও ৩০ নভেম্বরে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মাসে তিনটি করে তারিখ রাখা হবে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য।

আসামি শাহ আলম মিঠুর আইনজীবী জগন্নাথ সাহা বলেন, “রানাকে বেনাপোলে দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টায় আমার মোয়াক্কেল সহযোগিতা করেছে বলে দেখানো হয়েছে। অথচ আমার মোয়াক্কেল সোহেল  রানাকে চিনতেন না।
“এ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ এতটাই দ্রুত চলছে যে আমাদের তাল মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন।

কয়েক দিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন।

ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মামলা দায়েরের দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ১ জুন তদন্ত শেষে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর।

এর একটিতে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা-মা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র ও কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে অপর অভিযোগপত্রে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।

দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি। আসামিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল সাক্ষীদের আমরা পাব না। আর সব সাক্ষীর সাক্ষ্য দরকারও নেই। সামনের দেড় বছরের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে চেষ্টা থাকবে। দেখা যাক কতদূর সফল হই।”

Also Read: রানা প্লাজা ধস: মামলা বিচারে গতি