ঢাকায় নেমে ‘ডিবি পরিচয়ধারী’ ডাকাতের কবলে, বিপর্যস্ত প্রবাসী পরিবার

“কাকে যে বিশ্বাস করব ভাই। আমার ছোট ব্যাগে যে সব জিনিসপত্র, এটা তো আর কারও জানার কথা না। ওরা কিন্তু আমার লাগেজে হাতও দেয়নি।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2023, 01:47 PM
Updated : 17 August 2023, 01:47 PM

স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এক মাস আগে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন দুবাই প্রবাসী নূর হোসেন, কিন্তু ঢাকায় নেমেই ‘ডিবি’ পরিচয়ধারী ডাকাতের কবলে পড়ে এখন অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছে তাদের পুরো পরিবার।

গত ১৮ জুলাই আশুলিয়ার ধউর বেড়িবাঁধ এলাকায় তাদের মাইক্রোবাস থামিয়ে তল্লাশির নামে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

দেশে বেড়াতে এসে এমন ঘটনায় হতবিহ্বল নূর হোসেনের পরিবারের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে অসুস্থতা। তিনি এবং তার সন্তানরা জ্বরে ভুগছেন কয়েক দিন ধরে।

ডাকাতির ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন নূর হোসেন। এক মাস পার হতে চললেও পুলিশ কোনো কিনারা করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।

আশুলিয়া থানার ওসি মোমেনুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, “আমরা ওদের ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই খবর দিতে পারব।”

নূর হোসেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে রেস্তোঁরা ব্যবসায় যুক্ত। স্ত্রী, ১৩ বছরের ছেলে আর তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। একমাসের ছুটিতে দেশে আসতে গত ১৮ জুলাই ঢাকার ফ্লাইটে চাপেন তারা।

ওইদিন বিকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি ঢাকার মাটি স্পর্শ করে। বিমান বন্দর থেকে ভাড়া মাইক্রোবাসে বের হতে হতে সন্ধ্যা পার।

নূর হোসেন বলেন, তারা আসবেন জেনে তার ভায়রা সাখাওয়াত হোসেন আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে বিমানবন্দরে তাদের আনতে যান। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাত ৮টা নাগাদ তারা আশুলিয়ায় শ্যালিকার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

এক বছর পর দেশে ফিরে সবাই খুব আনন্দে ছিলেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে গাড়িটি আশুলিয়ার ধউর বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আরেকটি মাইক্রোবাস এসে তাদের গতিরোধ করে। সেই গাড়ি থেকে তিনজন নেমে তাদের ভাড়া গাড়ির চালকের জানালায় লাঠি ও হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকে। চালক তখন জানালা খুলে দেয়।

এরপর তারা হাত গলিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে চাবি নিয়ে নেয়। নিজেদের ‘ডিবির লোক’ পরিচয় দিয়ে বলে, গাড়িতে চোরাচালানের স্বর্ণ আছে বলে খবর আছে তাদের কাছে। তল্লাশির জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে।

নূর হোসেন জানান, যারা গাড়ি থামিয়েছিল, তাদের পরনে ছিল ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট। হাতে লাঠি ও টর্চ ছিল। প্রথমে তারা গাড়ির সামনে বসা সাখাওয়াতকে নামিয়ে নিয়ে তল্লাশি করে।

তাদের ব্যবহার প্রথমে ‘ভালো ছিল’ জানিয়ে নূর হোসেন বলেন, সাখাওয়াতকে ছেড়ে দিয়ে তারা মাইক্রোবাসের পেছনের দরজা খুলতে বলে। তিনি দরজা খুললে তাকে নামিয়ে মানিব্যাগ ও দুটো মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়।

তারা হাতব্যাগগুলো আগে তল্লাশি করবে বলে জানায়। এসময় নূর হোসেনের স্ত্রী হাতব্যাগ থেকে তাদের পাসপোর্টগুলো বের করে ‘ডিবি’ পরিচয়ধারীদের দেখাতে চাইছিলেন। কিন্তু তারা পাসপোর্ট না দেখে হাতব্যাগগুলো নিয়ে নিজেদের গাড়িতে গিয়ে ওঠে।

এসময় নূর হোসেন গাড়ির সামনে গিয়ে ব্যাগ ফেরত চাইলে তারা তাকে লাথি দিয়ে ফেলে গাড়ি নিয়ে আশুলিয়ার দিকে চলে যায়।

নূর হোসেন বলেন, তাদের ডাকাতির শিকার হতে দেখে সেখানে রাস্তার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক এবং কয়েকজন অটোরিকশা চালক ভিড় জমান। চাবি না থাকায় তাদের চালক গাড়ি চালু করতে পারছিলেন না।

১০ মিনিট পর আবার গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসে ‘ডিবি’ পরিচয়ধারী ডাকাতরা। নূর হোসেনের মানিব্যাগ ও গাড়ির চাবি ছুড়ে ফেলে দিয়ে সজোরে ঢাকার দিকে ছোটে ডাকাতদের গাড়ি।

নূর হোসেন বলেন, তারা বড় লাগেজের কিছুই নেয়নি। হাত ব্যাগে থাকা তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের গয়না, নগদ অর্থসহ (দিরহাম ও মার্কিন ডলার), মোবাইল ফোনসহ প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।

সেখানে জড়ো হওয়া লোকজন এসময় ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া দিলেও গাড়ি থামাতে পারেনি। পরে তাদের গাড়ির চালক ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশের একটি টহল দল সেখানে যায়। তবে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করে আটকের বিষয়ে তাদের কোনো সহায়তা পাননি বলে নূর হোসেনের অভিযোগ।

বিমানবন্দর থেকেই হয়ত তাদের অনুসরণ করা হচ্ছিল– এমন সন্দেহ প্রকাশ করে নূর হোসেন বলেন, “কাকে যে বিশ্বাস করব ভাই। আমার ছোট ব্যাগে যে সব জিনিসপত্র, এটা তো আর কারও জানার কথা না। ওরা কিন্তু আমার লাগেজে হাতও দেয়নি।”

বিপর্যস্ত এই প্রবাসী বলেন, “ভাই, আমি ১২ বছর ধরে দুবাই থাকি। আমার ভাইরাও সবাই পরিবার নিয়া থাকে। সেখানে আমাদের ব্যবসা আছে। দেশে আসছি এক বছর পর। দেশে এলে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয়। বাচ্চারা আনন্দ করে, এসব দেখতে ভালো লাগে।

“ওই ঘটনার পর থেকে বাচ্চারা জ্বর আর ট্রমায় ভুগছে। আমার নিজেরও জ্বর। পুরো ছুটিটা খুব হতাশার মধ্যে গেল।”