“এসব কাজ আরও করতে হবে,” ‘পাহাড়ের লাল আখ্যান’ নামের একটি বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
Published : 28 Oct 2024, 12:15 AM
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে বাংলাদেশে ‘ফ্যাসিবাদ’ বিলুপ্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ’আগে যা ছিল এখনও তাই আছে’ মন্তব্য করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘পাহাড়ে লাল আখ্যান’ বই অনেকটা অজানা জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে অনেক তথ্য জানাচ্ছে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যার লেখা ‘পাহাড়ের লাল আখ্যান’ বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ সিকদারের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে এ বইয়ের প্রকাশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ বইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক মিসিং পয়েন্ট আছে। এসব কাজ আরও করতে হবে। এই গ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের অনেকটা অজানা জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারছি।
“বাংলাদেশে এত বড় গণঅভ্যুত্থান হল, স্বৈরশাসন, ফ্যাসিবাদ বিলুপ্ত হল কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় এখনও এটা বলা যাবে না। পরিস্থিতি আগে যা ছিল এখনও তাই আছে।"
সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, আদিবাসী-বাঙালি এবং ধর্ম ও লৈঙ্গিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই বই প্রকাশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও আলোচনার সংযোজন করবে কিংবা চিন্তার ক্ষেত্রে একটি ধাক্কা দেবে।"
আনু মুহাম্মদ বলেন, "আমরা এই বই নিয়ে আলোচনা করলে সিরাজ সিকদার কিংবা সর্বহারা পার্টির এবং বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসঙ্গ আসে। সে সময়ে ষাট-সত্তর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের বিরোধ এর মাধ্যমে যারা মাক্সপন্থি-লেলিনপন্থি নামে বিভক্ত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব ও বাংলাদেশের বাম রাজনীতি। সেখানে সিরাজ সিকদার সন্তুষ্ট না হয়ে নিজের একটি ধারা তৈরি করেছিলেন।
”পাকিস্তানি কাঠামো দেখে 'প্রায় ঔপনিবেশিক' কাঠামো থেকে পূর্ব বাংলা যে স্বাধীনতার দিকে যেতেই হবে সেটা সিরাজ সিকদার বুঝেছিলেন। তিনি যেভাবে মূল দ্বন্দটা বুঝতে পেরেছিলেন সেটা সে সময় অনেক সিনিয়র রাজনৈতিকগণের মধ্যে আমরা দেখতাম না।"
সিরাজ সিকদারের সাহসিকতা ও ত্যাগের বর্ণনা দিয়ে নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির বলেন, “একটা ফ্যাসিবাদী সরকার কখনও অপজিশন রেখে রাজনীতি করে না। এজন্য শেখ মুজিবুর রহমান দেশে একদলীয় শাসন প্রচলন করেন এবং চারটি গণমাধ্যম রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেন।
”শেখ মুজিবের এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার প্রথম শিকার ছিলেন সিরাজ সিকদার। শেখ হাসিনার আমলেও এই জিনিসগুলো উপস্থিত ছিল। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র প্রতিবাদ করা লোকটি সিরাজ সিকদার।”
গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজ বলেন, "বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক মিথ রয়েছে। ওই মিথগুলোকে ব্যবহার করে ৫০ বছর রাজনীতি হয়েছে। ওই মিথগুলো ভাঙার মতো সত্য আমাদের ইতিহাসে ছিল এবং আছে। কিন্তু আমরা ওই পরিশ্রমের কাজগুলো করতে পারি নাই। এই বই সেরকম একটি পরিশ্রমী একটি কাজ, সেই অর্থে এটি খুবই অনন্য একটি কাজ হয়েছে।
”আমাদের বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়া যে ইমেজ তৈরি করেছে, সর্বহারা পার্টি গুম, খুন, ডাকাতি করেছে। কিন্তু এ বইয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে যে পাহাড়ি-বাঙালি সমতল-আদিবাসী সকলে মিলে এ দলের কর্মীরা শিক্ষাজীবন, সামাজিক জীবন পরিবর্তন এর রাজনীতি গড়ে তোলার পরিশ্রমী চেষ্টা ছাড়া আর কিছু ছিল না। এ বই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।"
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের বিষয়েও এ বইয়ে অনেক নতুন তথ্য রয়েছে। এ বই তার জলন্ত সাক্ষী, বলেন তিনি।
সিরাজ সিকদার স্টাডিজ সেন্টার প্ল্যাটফর্মের বাদল শাহ আলম বলেন, "'সিরাজ সিকদারের ’হিরোইজম’ নয়, তার রাজনীতি বুঝতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তার রাজনৈতিক দিকটা তুলে ধরতে হবে।“
‘পাহাড়ের লাল আখ্যান' বইয়ের লেখক সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের কিছু খণ্ডাংশ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের কার্যক্রম লিপিবদ্ধের ইতিহাসের বিষয়টি কিছুটা অসম্পূর্ণ রয়েছে। যদি সেই বিপ্লবের ইতিহাস তুলে না ধরা হয় বিপ্লবী সেসব ইতিহাস হারিয়ে যাবে।
সবাইকে সে ইতিহাস তুলে ধরতে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিরাজ সিকদার স্টাডিজ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক শিপলু রহমান।