“সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে আবেদন জানাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবেন, যারা যারা এর সাথে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবেন।”
Published : 10 Dec 2024, 08:16 PM
সরকার পতনের পর সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ছয় সদস্যকে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে আটক এবং পরে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনে।
সামরিক বাহিনীর সাবেকদের নিয়ে গঠিত ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’ এর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ঢাকা রির্পোর্টাস ইউনিটি অডিটোরিয়ামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মেহেদী হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৯ নভেম্বর নিকুঞ্জ এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ৬ সদস্যকে ‘যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে’ আটক করা হয়। তিনিও তাদের একজন।
বাকি পাঁচজন হলেন– সাবেক সাব লেফটেন্যান্ট দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সৈনিক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সৈনিক আশরাফুল ইসলাম, নৌ বাহিনীর সাবেক লিডিং সী ম্যান সেতু সাব্বির এবং নৌ বাহিনীর সাবেক পেটি অফিসার মো. আব্দুল হাকিম।
মেহেদী হাসান বলেন, তাদের ‘চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনার’ জন্য সেদিন তারা নিকুঞ্জের ট্রাস্ট শর্মা হাউজে মিলিত হয়েছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাধারণ পোশাকের কয়েকজন ঢুকে ‘যৌথ বাহিনী ও গোয়েন্দা’ পরিচয় দিয়ে তাদের ঘিরে ফেলেন।
“কারণ জনতে চাইলে তারা কোনো কারণ না বলে আমাদের চুপচাপ বসে থাকতে বলে। আমাদের মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নেয়. আর ছবি তুলতে থাকে।”
পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে তাদের ক্যান্টমেন্ট থানায় নেওয়া হয় জানিয়ে মেহেদী হাসান বলেন, “বারবার কারণ জানতে চাওয়া হলেও কোনো কথা না শুনে তারা পুলিশকে আমাদের হাজতে ঢোকাতে বলে চলে যায়।”
সারারাত হাজতে থাকার সময় কোনো খাবার দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে মেহেদী হাসান বলেন, পরদিন দুপুরে ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’ এর কয়েকজন সদস্য খবর পেয়ে থানায় এসে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় জানিয়ে মেহেদী হাসান বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ২০ ঘণ্টা আটক রাখা হয়েছিল। সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে আবেদন জানাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবেন, যারা যারা এর সাথে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবেন।”
অন্যদের মধ্যে জাস্টিস ফর কমরেডস এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যন্ট ইমরান কাজল ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যন্ট সাইফুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
এমন ঘটনা ঘটিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সেনা প্রধানকে ‘বিব্রত করার চেষ্টা’ হচ্ছে মন্তব্য করে শাকিল নেওয়াজ দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ‘সুষ্ঠু তদন্ত’ করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনাসহ মেজর সিনহা হত্যা, বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন খুন, গুম ও আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সেই সঙ্গে বিগত সরকারের সময়ে সশস্ত্র বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুতদের পুর্নবহালের দাবি জানান সাবেক এই কর্মকর্তারা।
তুলে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আব্দুল আলীমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ঘটনার রাতে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ছয় সদস্যকে থানায় নেওয়া কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এর কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি।
আর নিকুঞ্জের ট্রাস্ট শর্মা হাউজের একজন কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ঘটনার রাতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে ছয়জনকে নিয়ে যান।
"যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তারা আবার পরদিন এখানে এসেছিলেন। খাওয়া দাওয়া করেছেন।"
‘জাস্টিস ফর কমরেডস’ কী ধরনের সংগঠন জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মেহেদী হাসান বলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন।
“এখানে কারো তেমন কোনো পদ নেই। আমিও এটার সাথে জড়িত। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকুরিচ্যুত প্রায় তিনশ সদস্য রয়েছে। আমাদের দাবি দাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আমরা এই গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করি।”