জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে দণ্ডের ক্ষতিপূরণ কেন নয়: হাই কোর্ট

১৯৭৭ সালের সামরিক আদালতের সেই দণ্ড ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দণ্ডিতদের দেশপ্রেমিক হিসাবে বিবেচনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না– তাও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2022, 09:31 AM
Updated : 18 Oct 2022, 09:31 AM

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিমান বাহিনীর এক বিদ্রোহের ঘটনায় সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশন দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না– তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল জারি করে।

১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেই সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৮৮ পরিবারের পক্ষে ২০১৯ সালে এই রিট আবেদনটি করা হয়।

আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সঙ্গে ছিলেন মো. মতিউর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

সেনা ও বিমান বাহিনীর ওই ৮৮ সদস্য স্বাভাবিকভাবে অবসরে গেলে সেই সময় পর্যন্ত যে বেতন, অন্য সব সুবিধা ও পেনশন তারা পেতেন, তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

পাশাপাশি ১৯৭৭ সালের ‘মার্শাল ল রেগুলেশনে’ গঠিত ওই ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করা ও দণ্ডকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দণ্ডিতদের দেশপ্রেমিক হিসাবে বিবেচনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না– তাও জানতে চাওয়া হয়েছে ‍রুলে।

আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে ‘সার্ভিস অব ওয়ার্ড’ দিতে কেন বিবাদীদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও বিবাদীদের করা হয়েছে। 

প্রতিরক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, চিফ অব আর্মি স্টাফ, চিফ অব এয়ার স্টাফকে চার সপ্তাহে মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন।

সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে এ রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার ইতোমধ্যে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।

নয় বছর আগে ওই রায় হওয়ার পর জিয়ার আমলে বিচারের নামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি তুলে তাহেরের ভাই আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, অস্থির ওই সময়ে ‘বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের’ হত্যা করা হয়েছিল।

তার আগে আরেক রায়ে হাই কোর্ট বলেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি।

জিয়ার আমলে বিমান বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃতদন্ত দাবি করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ওই ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

রিট আবেদনে একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়; তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংগঠিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।

Also Read: জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে দণ্ডের ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন