রোববার করা এই আবেদনে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশন পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্তানসহ ৮৮ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
১৯৭৫ সালের অগাস্ট ট্রাজেডির পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়া সেনাপ্রধান হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও দখল করেন।
সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়েছিল।
১৯৭৬ সালে এই রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার অবৈধ বলে ইতোমধ্যে হাই কোর্ট থেকে রায় এসেছে।
ছয় বছর আগে ওই রায় হওয়ার পর জিয়ার আমলে বিচারের নামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি তুলে তাহেরের ভাই আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, ওই সময় বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল।
তার আগে আরেক রায়ে হাই কোর্ট বলেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি।
জিয়ার আমলে বিমান বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃতদন্ত দাবি করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ওই ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
তবে সে বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যে রোববার রিট আবেদনটি হল, যাতে প্রতিরক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মতিউর রহমান বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৭ -এর অধীনে সামরিক আদালতে অবৈধ দণ্ড এবং সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেই অবৈধ দণ্ডাদেশের সময় থেকে চাকরির স্বাভাবিক অবসরের সময় পর্যন্ত পদ-পদবী অনুযায়ী তাদের চাকরির সমস্ত বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সকল সুবিধাসহ পেনশন না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী কেন সরকারি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “মার্শাল ল রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৭ দ্বারা সামরিক আদালতে জিয়াউর রহমান অন্যায়ভাবে বিচার করেছিল। সেই বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, যাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল এবং যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিল সেসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার জন্য রিট আবেদনটি করা হয়েছে।
“একই সঙ্গে বেআইনিভাবে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাদের যেন এই সাজা থেকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং যারা মারা গেছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পোষ্যদের যাতে সরকারি চাকরিতে অ্যাকোমোডেট করা হয়, মূলত এই কয়টা বিষয় চাওয়া হয়েছে রিটে।”
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি উপস্থাপনে পরিকল্পনাও জানান এই আইনজীবী।
রিট আবেদনে একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়; তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।