গত ২১ সেপ্টেম্বর ও ১৫ অক্টোবর গেণ্ডারিয়ায় দুই রিকশাচালকে ছুরি মেরে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা।
Published : 07 Nov 2024, 04:48 PM
গত দুই মাসে ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই রিকশা চালককে হত্যার 'রহস্য উদঘাটনের' দাবি করে পুলিশ বলছে, রিকশা ছিনতাই করতে গিয়েই তাদেরকে খুন করা হয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে গেণ্ডারিয়ার আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে ৬০ বছর বয়সী রিকশাচালক জিন্নাহ ও ১৫ অক্টোবর গেণ্ডারিয়ার কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে ৪০ বছর বয়সী রিকশাচালক আনোয়ারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
'ক্লুলেস' দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে নেমে জালাল সরদার ওরফে মাইকেল, ফজলে রাব্বি ওরফে কালা ও মো. ইমরান নামে তিনজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি ওয়ারী বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ওই তিনজন যাত্রীবেশে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া করে সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে ‘চালককে ছুরি মেরে রিকশা ছিনিয়ে নিত’।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলন করে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানান ছালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে রিকশাচালক জিন্নাহ জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন।
“পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী নিয়ে রাত ৩টার দিকে গেণ্ডারিয়া থানার আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে পৌঁছালে ওই দুজন যাত্রী পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। জিন্নাহর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে যাত্রী দুইজন পালিয়ে যায়।"
স্থানীয়রা রিকশাচালক জিন্নাহকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ওই ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়া খানায় একটি হত্যা মামলা করেন জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেন।
ছালেহ উদ্দিন বলেন, ওই মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিকশাচালক আনোয়ারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে তার রিকশা ছিনতাই করা হয়।
এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর নিহতের চাচাতো ভাই মো. মানিক একটি হত্যা মামলা করেন।
দুটি ঘটনায় ‘অপরাধের কৌশল' একই ছিল জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন বলেন, "পুলিশ নিশ্চিত হয়, একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সকল ধরনের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দুজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।"
পরে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে জালাল সরদার ওরফে মাইকেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘দুটি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন’ বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উপ কমিশনার ছালেহ উদ্দিন বলেন, “জালাল জানায়, রিকশাচালক জিন্নাহকে হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গে ফজলে রাব্বি কালা ছিল। আর দীননাথ সেন রোডে রিকশাচালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিকশা ছিনতাই সে একাই করেছে।”
জালাল ছিনতাই করা রিকশাটি মো. ইমরান নামে গেণ্ডারিয়ার একজনের কাছে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। গত ২৫ অক্টোবর ডিআইটি প্লট এলাকা থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি রিকশাটি উদ্ধার করে পুলিশ।
জালাল সরদার ওরফে মাইকেল গত ২৫ অক্টোবর ও ৬ নভেম্বর দুই হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তার দেওয়া তথ্যে ৩ নভেম্বর রাতে গেণ্ডারিয়ার কবরস্থান এলাকা থেকে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তিনিও আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দেন বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ছালেহ উদ্দিন বলেন, "হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছিল জালাল। ঘটনার পর পর সেগুলো ফেলে দিয়েছে। অভিযান চালিয়েও সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।"
গ্রেপ্তাররা এর আগেও এমন কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিল কি-না জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, "তারা স্বীকার করেনি, তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।"
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সম্প্রতি ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুর থানায় আগুনের ঘটনায় অনেক তথ্য পুড়ে গেছে। কিছু কিছু তথ্য আদালত থেকে নিয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করেছি।"