নিরাপত্তা কর্মীরা টের পেয়ে কৌশলে তাদেরকে আটক করেন; পরে জিজ্ঞাসাবাদে ‘প্রতারণার’ বিষয়টি সামনে আসে।
Published : 06 Jan 2025, 08:18 PM
তারা যে সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা তা জাহির করতে রাজধানীতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে ফেইসবুকে লাইভ করছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, ধরা পড়ার পর সামনে এসেছে তাদের ‘প্রতারণা’র বিষয়গুলো।
এখন উল্টো মামলার আসামি হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে ওই তিন ব্যক্তিকে।
তারা ছদ্মবেশে নিজেদের দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে 'দুর্নীতিবিরোধী' অভিযান পরিচালনা, জরিমানা ধার্য ও আদায়ের নামে ‘চাঁদাবাজি’ করে আসছিলেন বলে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
পরে রাজধানীর পল্টন থানায় প্রতারণার অভিযোগে দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে সোমবার বিকালে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের গেইট থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ (ঠিকানা: ৮৫ নয়া পল্টন, ৪র্থ তলা) নামে একটি ভুয়া সংস্থার পরিচয় উদ্ধারের তথ্য দিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- কথিত ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থার‘ নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সম্রাট, পরিচালক (অপারেশন) মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান ও নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম।
এছাড়া মামলায় পটুয়াখালীর সোলাইমান মুফতি, সিয়াম মাহমুদ মোবারক, হবিগঞ্জের রনি আহেমদ পায়েলসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তারা সবাই প্রতারক চক্রের সদস্য বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার বলেন, "ভুয়া পরিচয়দানকারী দুদক কর্মকর্তাদের আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। পরে তাদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে অজ্ঞাত আট আসামিসহ ১৪ জনের নামে প্রতারণার অভিযোগে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।"
দুদক কর্মকর্তারা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুদকের আশপাশ থেকে দুদকের সহায়ক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে অভিযানের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
তারা বলেন, সোমবারও এ চক্রের সদস্যরা দুদকে সামনে এসে ফেইসবুকে লাইভ সম্প্রচার করে নিজেদের আসল দুদক কর্মকর্তার সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দর্শকের কাছে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি দুদকের নিরাপত্তা কর্মীরা টের পেয়ে কৌশলে তাদেরকে আটক করেন। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ‘প্রতারণার’ বিষয়টি সামনে আসে।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাছ থেকে নগদ ও ’বাকিতে’ প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করার কথা স্বীকার করেছেন।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার বলেন, "সরকারি কর্মচারী না হয়েও পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্মচারির ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার আশ্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইন বহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন।
‘‘জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক মীমাংসা নামে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে আসছিলেন তারা।’’
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, আসামিরা 'দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা' নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দুদকের সহযোগী বাহিনী পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা করে থাকেন। দুদকের অনুরূপ তাদের নিজস্ব লোগো সংবলিত ইউনিফর্ম, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইনবহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, এসব অভিযানের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, অন্যথায় দুদকে অভিযোগ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এসব অভিযানের সময় ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে দেওয়া, বিকৃত তথ্য প্রচার করে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করে আসছে বলেও এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।