হঠাৎ করেই আমন্ত্রণটা পেলাম। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সার্ক রাইটার্স ফাউন্ডেনের প্রধান অজিত কাউর। আমাদের মধ্যে পূর্ব পরিচয়ের কারণেই এই আমন্ত্রণ। তারই সূত্র ধরে গত ২০.১০ ১৩ থেকে ২৩.১০.১৩ পর্যন্ত ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সুফি উৎসব ও সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করলাম আমরা চারজন প্রতিনিধি । ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত সার্ক রাইটার ফাউন্ডেশন (ফসওয়াল) প্রতিবছর বিভিন্ন শহরে সাহিত্য, লোকবিদ্যাসহ নানা বিষয়ে সম্মেলন ও উৎসবের আয়োজন করে। আমি আগেও গিয়েছি এ জাতীয় সম্মেলনে। তবে এবার পিংক সিটি খ্যাত জয়পুরে উৎসবে হবে শুনে ফসওয়ালের প্রধান অজিত কাউরকে কথা দিয়েছিলাম, আমি যাবোই। ভাবলাম জয়পুর তো দেখা হবে, আরো দেখা হবে আজমীর শরীফ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি যাবো একা । আর আমার বাকি তিন বাংলাদেশী সঙ্গী যাবেন ঢাকা থেকে । তাঁরা হলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বিশিষ্ট কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দা আইরিন পারভিন। শুনেছি আরো কয়েকজন লেখক-গবেষক আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁদের যাওয়া হয়নি। হয়তো কোরবানি ঈদের পর পরই অনুষ্ঠান বলে মনে একটু অস্বস্তি ছিল সবার। শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো আমাদের চারজনের ।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসন ঢাকা থেকে সরাসরি জয়পুর যাবেন ঠিক ছিল। অন্য দুজন নিজেদের মতো করে ঢাকা থেকে কোলকাতায় এসে আমার সঙ্গে যোগ দেবেন কথা ছিল। আমি ১৭ তারিখ দুপুরে কোলকাতায় পৌছলাম হোটেল ওরিয়েন্টালে। কিছুক্ষণ পর হুদাভাই কোলকাতার কবি ও শিল্পী সাদিকসহ আমার সঙ্গে মিলিত হলেন। বিকেলে আমরা সাদিকের সহায়তায় দুরন্ত এক্সপ্রেসের টিকেট সংগ্রহ করলাম কোলকাটা ট্রাভেল্স থেকে। আমরা দুজন রাত কাটালাম ওরিয়েন্টাল হোটেলে। পরদিন পূর্বাহ্নে আমরা হাওড়া থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেসে যাত্রা শুরু করবো নয়া দিল্লীর উদ্দেশে। হলোও তাই। তবে তার আগে ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যাবেলা আমরা গোর্কি সদনে যোগ দিলাম একটি পূর্ব-নির্ধারিত সাহিত্য অনুষ্ঠানে। কোলকাতার প্রগতি সাহিত্য সংবাস ও গোর্কি সদন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানটি দুইভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে বাংলাদেশেল শীর্ষস্থানীয় কবি মুহম্মদ নূরল হুদাকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর সামগ্রিক অবদানের জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হলো। তারপর উদ্যোক্তাদের অনুরোধে কবি তাঁর প্রিয় কিছু কবিতাও পড়ে শোনালেন। দ্বিতীয় পর্বে কোলকাতার সুখ্যাত 'অমি প্রেস'-এর মালিক, বিশিষ্ট লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী পৃথ্বীশ সাহার স্মরণে শদ্ধা-নিবেদন ও আলোচনা-সভা অনুষ্ঠিত হলো। পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করলেন সমকালীন বাংলা কথাসাহিত্যের ব্যতিক্রমধর্মী কারুকৃৎ ও চলচ্চিত্র পরিচালক শাহযাদ ফিরদাউস।
আমরা ১৮ অক্টোবর প্রায় ১টার দিকে রওনা করে ১৯ তারিখে সকাল ৮টার দিকে পৌছলাম দিল্লী স্টেশনে। সেখান থেকে ট্যাক্সি করে পৌছলাম ফসওয়াল অফিসে। এই বাড়িতেই আছে একাডেমি অব ফাইন অর্টস। আবার এখানেই থাকেন ফসওয়াল চেয়ারপারসন বিশিষ্ট পাঞ্জাবি লেখক অজিত কাউর ও তার কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী অর্পণা কাউর। অজিত কাউর আমাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। আমরা এখানে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। দুপুরের আহার গ্রহণ করলাম। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন দিল্লীতে অবস্থানকারী বাঙালি কবি প্রাণজি বসাক। বেশ অমায়িক ও খোলমেলা মানুষ। হুদাভাইয়ের সঙ্গে তার আগেই পরিচয় ছিল।
ইতিমধ্যে উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদল এসে আমারে সঙ্গে মিলিত দিলেন। আয়োজকদের প্রতিনিধিসহ আমরা সবাই বাস যোগে রাজস্থানের রাজধানী পিঙ্ক সিটি হিসেবে খ্যাত জয়পুরের দিকে রওনা দিলাম। বিমান বন্দরে কাছাকাছি আরেকটি স্টপেজ থেকে আমাদের সঙ্গে আরো ক'জন আফগান, পাকস্তানি ও নেপালী লেখক-শিল্পী যোগ দিলেন। দাড়ি-জাব্বা-টুপি শোভিত একজন সম্মানিত আফগান পীর বসলেন আমাদের সামনে। দুই সিটে একা, বিশাল দেহী এবং স্মার্ট। ভারতের ট্রেন উন্নত, কিন্তু বাসের রাস্তা ভালো না – এরকম ধারণা ছিল আমার। কিন্তু দিল্লী টু রাজস্থান হাইওয়ে দেখে আমার ধারণা পাল্টে গেল। সত্যিকারের হাইওয়ে এগুলো। ছোট ছোট বাজারের ওপর ওভারপাস। তিন তিন ছয় লেনের রাস্তা, মাঝখানে ফুলের বাগান। টোল দিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। তাতে কারো কোনো আপত্তি নেই। দিল্লী পেরুবার পথে দেখলাম অজস্র পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা, শিল্প এলাকা। রাত আটটার দিকে শহরে প্রবেশ করার মুখে দেখলাম পাহাড়ের ওপর অনেক ঘরবাড়ি। যাওয়ার পথে জলমহল, হাওয়ামহল দেখতে পেলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা রাত দশটা নাগাদ ঐতিহাসিক দিঘি প্যালেস হোটেলে এসে পৌছলাম। দশ একর জায়গা নিয়ে বিশাল হোটেলটি আসলে পুরনো রাজার বাড়ি। তাদের বংশধরেরাই এখন হোটেল চালাচ্ছেন। প্রতিবছর এখানে নানা ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠত হয়। এর মধ্যে জয়পুর আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সম্মেলনে অনেক নবেল-লরিয়েটও যোগ দিয়ে থাকেন। আমরা ঢুকতে ঢুকতে দেখলাম, হোটেলের সামনের প্রাঙ্গনে নানাধরনের শাড়ি, লোকগহনা ও রাজস্থানী লোকপণ্যের বিশাল মেলা বসেছে। ভারতীয়রা সংস্কৃতির সঙ্গে বাণিজ্যকেও বিস্মৃত হয়নি।
২০ অক্টোবর সকাল ১০টায় হোটেলের অডিটোরয়িমে সম্মেলন ও উৎসবের উদ্বোধন। উদ্বোধক রাজস্থানের গর্ভণর মার্গারেট আলভা। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিজম মন্ত্রি বীণা কাক এবং সার্ক রাইটার ফাউন্ডেশনের সভাপতি লেখক অজিত কাউর । এই উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,তুরস্ক, নেপাল, উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে প্রায় একশত লেখক-গবেষক-শিল্পী যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিনেই আমার চারজন নানা বিষয় নিয়ে কথা বললাম। বিশেষ করে কবি নূরুল হুদা আমাদের সবার উপস্থাপনা যাতে ভালো হয় সেদিকে তাগিদ দিলেন। কেননা আমাদের দলের একটি বড় অসম্পূর্ণতা ছিল আমাদের কোনো শিল্পী নেই। কাজেই আমাদের পারফরমেন্স ভালো করতেই হবে।
সমাগত লেখকদের মধ্যে নেপালের অভি সুবেদীকে চিনতাম অনেক আগে থেকে। অন্যদের মধ্যে পাকিস্তানের ফারুক ওয়াসেক অনেকক্ষণ ধরে কথা বললেন। প্রথম দিনের প্রথম সেমিনারে কবি নূরল হুদা ও সেলিনা হোসেন তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করলেন । সেলিনা হোসেন সুফিজম, সাহিত্যে তার তাৎপর্য ও বিশ্বশান্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেন। কবি নূরুল হুদা পড়লেন বাংলাদেশের লালন শাহ ও তুর্কি কবি ইউনুস এমরেকে নিয়ে একটি তুলনামূলক প্রবন্ধ। তিনি লালনের কবিতা বাংলা ভাষা ও ইংরেজি অনুবাদে, এবং ইউনুস এমরের কবিতা বাংলা অনুবাদসহ তুর্কি ভাষায় আবৃত্তি করে চমক দিলেন। উপস্থিত তুর্কি কবি-গবেষক-শিল্পী ও সমাগত সবাই তুমুল করতালিতে তাঁকে অভিনন্দিত করলেন। দুদিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতটি একাডেমিক সেসনে প্রায় চল্লিশজন বিশেষজ্ঞ-গবেষক প্রবন্ধ পড়েন। এইসব একাডেমিক সেসন উপস্থাপনা করলেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. রেফাকত আলী খান। প্রতি সেসনের পর দু'জন করে কবি কবিতা পড়লেন। মূলত তুরস্ক, উজবেকিস্থান, আফগানিস্থান, পাকিস্তান ও ভারতের কবিরা কবিতা পড়েছেন। আমি প্রবন্ধ পড়লাম বাংলাদেশের 'পীর সংস্কৃতি : আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা' প্রসঙ্গে। আমি আমার প্রবন্ধে বাংলাদেশে তৃণমূলীয় স্তরে আধ্যাত্মিকতা বিকাশে সুফিজমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করলাম। ড. সৈয়দা আইরিন জামান বাংলাদেশের আধুনিক কবিতায় সুফিপ্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি সংক্ষেপে বাংলাদেশে সুফিবাদের আগমন ও মধ্যযুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত কবিতায় তার প্রতিফলন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আধুনিক বাঙালি কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ ও মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি প্রদান করেন। আমি ও হুদাভাই সময়ের অভাবে আমাদের কবিতা পাঠ করতে পারলাম না।
সেসনের ফাঁকে ফাঁকে, খাবারের সময় ও সন্ধ্যাবেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমরা বহু মানুষের সাথে কথা বললাম। বেশি কথা হলো নেপালিদের সাথে। ওরা বেশ আন্তরিক। শ্রীলঙ্কার দয়া দেশানায়কের সাথে কয়েকদিনে বেশ খাতির হয়ে গেল। পাকিস্তানি ফাহমিদা রিয়াজ, আফগান কবি নিলুফার নিকসিয়ার, জোহরা জহির, সোমাইয়া রামিশ এবং অনেক ভারতীয় কবির সাথে আলাপ হলো। উপস্থাপক মিতউয়া আসলে একজন কমেডিয়ান । তিনি একাডেমিক সেসন ও সাংস্কৃতিক সেসনে অতিথিদের হাসিয়েছেন সব সময়। সন্ধ্যায় সুফি নৃত্য ও গান পরিবেশন করেছেন তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগান,আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের শিল্পীরা । ঢোলের তালে তালে লম্বাচুলের নাচিয়েদের চুলের ঘূর্ণি ভারতীয়রা খুব পছন্দ করে। চন্দ্রীগড়ে ফোক ফেস্টিভালে ওদের নাচ দেখেছি। এমন আহামরি কিছু নয়। শারীরিক কসরত হিসেবে ভালো। বাংলাদেশের বাউলেরা এলে ভালো হতো । গানও হতো, নাচও হতো । বাংলাদেশের কোন গায়ক নেই এখানে, ভাবতেই খারাপ লাগলো। উজবেক মেয়েরা নাচল সুফি মিউজিকের তালে তালে। আফগান বাদক বাজালো রবাব আর তার সাথে সুফি গান। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থান। অথচ সঙ্গীতে যে তারা কত উন্নত তা তাদের এই গান ও বাজনাতেই বোঝা যায়। উজবেক মেয়ে জেবা নাচল সুফি মিউজিকের তালে তালে। মনমাতানো সেই নাচ। সবাই খুব পছন্দ করলো।
সম্মেলনে যোগ দেওয়া লোকজনের বাইরেও হোটেলে প্রচুর ইউরোপীয়দের দেখলাম। হালকা শীত পড়া শুরু করেছে। তারা সন্ধ্যায় লোকজ শিল্পীদের পরিবেশনা দেখছেন হোটেলের লনে বসে। আট দশজনের একটি করে গ্রুপ প্রতিদিন সরাবের আসর বসিয়ে ফোক গান আর নাচ দেখছে। একটু হৈ-হল্লাও করছে। আমি কিন্তু সহজভাবে মেনে নিতে পারলাম না।
সম্মেলনের পর দিনই হুদাভাই বাংলাদেশে ফিরে গেলেন তাঁর অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ড. আইরিন ফিরে গেলেন কোলকাতায় তাঁর গবেষণার কাজে । রয়ে গেলাম আমি আর সেলিনা হোসেন। আমরা সবার সঙ্গে আজমীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। শক্তিগড় কিষানগড় পার হয়ে ঘন্টাদুয়েক পর আমরা আজমীরে হযরত খাজা মাইনুদ্দিন চিশতির দরবারে হাজির হলাম। আমরা একটা গদিতে বিয়াল্লিশ জন গিয়ে বসার পর ওরা হারমোনয়িাম নিয়ে খাজা বাবার উদ্দেশ্যে গান গাওয়া শুরু করলো। বহু কসরত করে মাজার জিয়ারত করলাম সবাই। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান কেউ বাদ গেল না সেজদা করতে। আমি সামান্য দ্বিধায় ছিলাম। দেখি আমার আগে নেপালি শিবা মাথা ঠেকিয়ে দিয়েছে । কাজে কাজেই আমার আপত্তি করার কি থাকতে পারে। আবার গদিতে ফিরে এলে আফগান সুফি মাওদুদি ( তিনি তখন কালো চশমা পরেছেন আর চুপি চুপি হাসছেন) মোনাজাত করলেন। তারপর ছেলেদের তবারোক বিলি করলো গদির লোকজন। মেয়েরা পেল অন্য একটি প্যাকেট। সেলিনা আপা আমাকে চুপি চুপি বললেন, আমি এক প্যাকেট তবারক নিতে চাই, বাড়ি নিয়ে যাবো। গদির মালিককে বলে একটা ব্যবস্থা করা গেল। লোকে লোকারণ্য মাজার শরিফ। আমরা আমাদের কাজ সেরে কোনোরকমে বের হয়ে এলাম।
পরদিন সকালে আবার আমরা সেই বাসে করে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ভোর পাঁচটায়। বাস ধরতে গিয়ে শুনি চারদিকে থেকে মসজিদের আযান হচ্ছে। আবার মাঈনুদ্দিন চিশতির তখন মনে হলো। ঘন্টাদুয়েক পর আফগান বাদক মোজেব তার রবাব বাজাতে শুরু করলেন। বাসের মেঝেতে বসে তবলা বাজতে শুরু করলেন আফগান যুবক ফরিদ। আরও পরে গান গাইতে শুরু করলেন আফগান এক গায়ক। রবাবের মূর্ছনায় বাসের সবাই বিভোর । আমার একবার মনে হলো সবাইকে লালন ফকিরের একটা গান শুনিয়ে দেই। বাজাতে পারি না মনে করে গাইলাম না। সুরের ঝংকারে উজবেক মেয়ে জেবা নাচতে শুরু করলো, তার সঙ্গে যোগ দিল ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক থাপা। নানা কায়দায় ছবি তুলতে লাগলেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশ সুবেদী। আফগানিরা প্রায় চার ঘন্টা বাসে গান করলো। হায়, সঙ্গীতপ্রিয় এই আফগানদের মধ্যে কেউ কেউ কী ভেবে যে সন্ত্রাসী তালেবান হয়ে গেল!
তিন দিনের এই উৎসবমুখর মহামিলন শেষে আমার বার বার মনে হতে লাগলো, হয়তো এরকম নির্মল আত্মিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগই পারে দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে।