প্রসঙ্গ কেবল বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা ঘোষণা

বিএনপির এই অসার ও ভিত্তিহীন দাবীর বিপক্ষে এই বইটি এক মোক্ষম দলিল।

রাজু আলাউদ্দিনরাজু আলাউদ্দিন
Published : 26 March 2024, 05:35 PM
Updated : 26 March 2024, 05:35 PM

গত পঞ্চাশ বছরে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ক অসংখ্য বই বেরিয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু নিয়ে তো বইয়ের কোনো শেষ নেই। বঙ্গবন্ধুর এতসব দিক নিয়ে বই বেরিয়েছে যে এখন মনে হয় বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত নতুন কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে। তবুও নতুন নতুন বই বেরুবে তাকে নিয়ে, তার মধ্যে নতুনত্ব কিছু থাকবে, আবার চর্বিতচর্বনও কিছু যুক্ত হবে একঘেয়েমি বাড়াবার জন্য। স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়েও বইয়ের সংখ্যা অগণন। তবে বিদেশি গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে বাংলায় বা ইংরেজিতে বইয়ের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। পিআইবি থেকে এই বিষয়ে কয়েক খণ্ডে বই বেরিয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বহু খুঁটিনাটি সত্য বিধৃত। সন্দেহ নেই যে তা এক গুরুত্বপূর্ণ সংকলন। কিন্তু সম্প্রতি পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত The declaration of Bangladesh Independence by Bangabandhu Shiekh Mujibur Rahman in the World Press বইটির আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। বইটিতে রয়েছে পৃথিবীর ২৬ টি দেশের অসংখ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের কথা। ইংরেজিভাষী দেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনগুলোর সাথে আমরা আগেই পরিচিত ছিলাম ইংরেজি আমাদের প্রায় দ্বিতীয় ভাষা হওয়ার কারণে। কিন্তু ইংরেজি নয়, এমন অন্তত ১৮টি ভাষার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয়--মূলত ভাষিক দেয়ালের কারণে। সদ্যপ্রকাশিত এই বইটিতে স্প্যানিশ, পর্তুগেজ, জার্মান, ফরাসি, ইন্দোনেশিয়,ইতালিয়, পোলিশ, তুর্কি ইত্যাদি ভাষার ১৮টি দেশের প্রতিবেদনের ইমেজ যুক্ত হয়েছে এই গ্রন্থে। পাশাপাশি পরবর্তী পৃষ্ঠায় সেই প্রতিবেদনের বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ক অংশটুকু ইংরেজিতে তর্জমা করা হয়েছে। মূল প্রতিবেদনের ইমেজ ও পাশাপাশি তর্জমা এমনভাবে বিন্যাস্ত হয়েছে যে অন্বিষ্ট বিষয়টি পাঠককে খুঁজে পেতে খুব একটা গদলঘর্ম হতে হয় না। এই বিন্যাসের মধ্যে মুনশিয়ানা যে আছে তা বইটির পৃষ্ঠাগুলো চোখ বুলালেই বুঝা যায়। পাঠকবান্ধব এই বিন্যাস যা প্রকাশনীর ভাষায় Concept, Layout, Design, Editing & Typesetting, এটি পুরোপুরি পাঠক সমাবেশ-এর পরিকল্পনা থেকে এসেছে। এর ফলে বইটি যেমন দৃষ্টিনন্দন হয়েছে, তেমনি তা হয়ে উঠেছে পাঠকবান্ধব।

তবে এই বইয়ের মূল আকর্ষণ ও গুরুত্ব মূলত এর তথ্য ও দালিলিক ঐশ্বর্য্যে। সংকলক ডক্টর Md. Mofakkharul Iqbal বিরল সব তথ্য ও দলিলের সমাবেশ ঘটিয়েছেন এই গ্রন্থে। সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজিতে ভিন্ন ভিন্ন দুটি মুখবন্ধ যুক্ত করেছেন। সংকলক ইকবাল অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এই তথ্যগুলোকে সংগ্র্রহ করেছেন এবং সাজিয়েছেন। এই গ্রন্থ মূলত ভারত, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার একাধিক ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত হয়েছে। ভারতের বাংলাভাষী পত্রিকার প্রতিবেদনও বাদ যায়নি। স্বাধীনতার ঘোষণাকে অপহরণ করার যে রাজনীতি ও ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরপর, তার বিরুদ্ধে এই বইটি একটি প্রধান ও অকাট্য ভূমিকা পালন করবে। বিরোধী দল বিএনপি তার জন্মের পরপরই বলে আসছে এবং তাদের কর্মীদের তা বিশ্বাসও করিয়ে ছেড়েছে যে স্বাধীনতা ঘোষণার নায়ক বঙ্গবন্ধু নন, বরং সাবেক সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যদিও জীবদ্দশায় কখনো এই দাবী করেননি, কিন্তু তার অনুসারী রাজনীতিবিদ ও কর্মীরা এই ভুল ও অসত্য ধারণাকে লালন করেন। কিন্তু আমরা যদি আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পাঠ করি তাহলে এর কোথায়ও জিয়াউর রহমানের কোনো উল্লেখ দেখতে পাবো না। যদি তিনি ঘোষক হতেন--তবে ভুলে যাচ্ছি না তিনি মহান এক মুক্তিযোদ্ধা-- তাহলে পৃথিবীর এতগুলো দেশের অসংখ্য গণমাধ্যমের একটিতেও কেন তার কথা উল্লেখিত হলো না? সুতরাং, বিএনপির এই অসার ও ভিত্তিহীন দাবীর বিপক্ষে এই বইটি এক মোক্ষম দলিল। আমি মনে করি, স্বাধীনতা ঘোষণাবিষয়ক সমস্ত তর্ক বিতর্কের অবসান হতে পারে এই বইটির মাধ্যমে। সংকলক মোফাক্খারুল ইকবাল একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছেন। এই বইটি পাঠকদের ভ্রান্তি মোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। প্রকাশক হিসেবে পাঠক সমাবেশের কর্ণধার সাহিদুল ইসলাম বিজু মুখবন্ধে বইটির গুরুত্ব বিষয়ে তার অভিমত জানিয়েছেন যা পাঠককে বইটির ঐশ্বর্য্য সম্পর্কে সম্মক ধারণা পেতে খুব সহায়ক হবে। পাঠক সমাবেশকে ধন্যবাদ ও কৃত্জ্ঞতা জানাই এই অসামান্য বইটি স্বাধীনতা দিবসে পাঠকদের কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য প্রকাশ করার জন্য।