জলবায়ু তহবিল নিয়ে মুহিতের ক্ষোভ

জলবায়ু তহবিলের অর্থ ছাড় না হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন ডিসি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2016, 06:25 AM
Updated : 9 Oct 2016, 07:28 AM

শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মুহিত বলেন, “তহবিল গঠন হয়, কিন্তু অর্থ মেলেনা। এটা দুঃখজনক।”

এ সুরাহা করতে উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু জলবায়ু তহবিল থেকে পেয়েছে মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার।

“আরও ১০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে, হবে বলেও দেওয়া হচ্ছে না।”

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে বৈঠকে আমি করুণ এই চিত্র তুলে ধরেছি। বলেছি, শুধু অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি বা তহবিল গঠন করলেই হবে না, সেই তহবিলের অর্থ যাতে ক্ষতির শিকার দেশগুলো পায় সেটা নিশ্চত করতে হবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা অন্য দেশের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে একই দাবি জানিয়েছেন বলে জানান মুহিত। 

তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলে ছোট দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে গঠিত তহবিলের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট নিজেও বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন বলে জানান মুহিত।

২০১২ সালে মেক্সিকোয় জি-২০ বৈঠকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর অর্থে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে অর্থ দিয়ে এই তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছিল উন্নত দেশগুলো।

ওয়াশিংটন ডিসিতে শনিবার আইএমএফ সদর দপ্তরে আইএমফের গভর্নরদের আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের র্কাযক্রম শুরু হয়।

ওই ফটো সেশনে আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্ড-এর সঙ্গে প্রথম সারিতে ছিলেন বাংলাদেশের র্অথমন্ত্রী মুহিত।

এরপর সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আইএমএফ প্রধান। বৈঠকে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

পরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গঠিত তহবিল এবং ভবিষ্যত করনীয় নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন মুহিত।

বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সম্মেলনের ফাঁকে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি মাইকেল কাপলানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ বৈঠক প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি। কিন্তু দেওয়া হবে, দেওয়া হবে বলেও আমাদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি আমি তাদের কাছে তুলে ধরেছি।”

কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “তারা তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে।”

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আট শতাংশের বেশি বেড়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বরেন, “চলতি অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকা বাড়ছে। ওষুধ রপ্তানির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্কয়ার, বেক্সিমকোসহ কয়েকটি কোম্পানি ওষুধ রপ্তানি শুরু করেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া গেলে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

মুহিত বলেন, “আমরা যেটা ঘোষণা করি, সেটা বাস্তবায়ন বা অর্জন করে ছাড়ি। ২০০৯ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০১৫ সালের মধ্যেই সেটা আমরা অর্জন করেছি।

“২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ গড়ার যে ঘোষণা আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটাও আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব বলে আমার দৃঢ বিশ্বাস।”

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ‘মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে’ দাবি করে মুহিত বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে আমরা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। ইতোমধ্যে ৭ শতাংশে পৌঁছে গেছি। এবার ৭ শতাংশের বেশি হবে।”

তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরস্থিতির উন্নতি হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, “জিডিপি প্রবৃদ্ধির ২২-২৩ শতাংশ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়।”

চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশার কথা শোনান মুহিত।

স্থানীয় সময় রোববার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সম্মেলন শেষ হবে।