স্টেম কোষ ব্যবহার করে সফলভাবে মানবদেহের সুষুম্নাকাণ্ড পুনঃনির্মাণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা।
Published : 29 Mar 2016, 07:13 PM
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড মিরর জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের বিজ্ঞানীদের যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় স্টেম কোষ থেকে প্রাপ্ত নিউরনকে ইঁদুরের ক্ষতিগ্রস্ত কর্টিকোস্পাইনাল ট্র্যাক্ট পুনরায় সৃষ্টিতে সফলভাবে ব্যবহার করা গেছে।
এই ট্র্যাক্টগুলো মানবদেহ এবং ইঁদুর উভয়ের ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের উর্ধ্বাংশের সেরিব্রাল কর্টেক্স ও সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং দেহের মোটর ফাংশনগুলো নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এবারই প্রথমবারের মতো ইঁদুরের ক্ষতিগ্রস্ত সুষুম্নাকাণ্ড মেরামত করতে স্টেম কোষ ব্যবহৃত হলো। এর ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা এবং সফলভাবে আরোগ্যলাভের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন স্টেম কোষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানীরা।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন থেরাপির মধ্য দিয়ে ইঁদুরে যথেষ্ট উন্নতি দেখা গেছে বলে জানা যায়। তবে, এর মধ্যে কোনোটিই কর্টিকোস্পাইনাল অ্যাক্সন-এর পুনর্গঠন সংক্রান্ত ছিলো না বলে জানিয়েছে ট্যাবলয়েডটি।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-এর স্যান ডিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক অধ্যাপক মার্ক তুসজিনস্কি বলেন, “মানবদেহের সিস্টেমগুলোর মধ্যে কর্টিকোস্পাইনাল প্রজেকশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে কখনও সফলভাবে এর পুনঃনির্মাণ ঘটানো সম্ভব হয়নি। আমাদের এর আগের প্রচেষ্টাগুলোর মতোই আরও অনেকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিউরাল স্টেম কোষ পূর্ববর্তী পরীক্ষায় ব্যবহৃত কোষের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে পুনর্গঠন প্রবণতা দেখায় কিনা তা নির্ধারণে কোষ ব্যবহার করেছি।”
এ প্রক্রিয়ায় গবেষকেরা ইঁদুরের ক্ষতিগ্রস্ত সুষুম্নাকাণ্ডে মাল্টি-পটেন্ট নিউরাল প্রোজেনিটর কোষ স্থাপন করেন। এতে কোষগুলো ভালোভাবেই সাড়া দেয় এবং কার্যকরী সিন্যাপ্স তৈরি করে, যা ইঁদুরের দেহের সম্মুখভাগের নড়াচড়ায় উন্নতি ঘটায়।
অধ্যাপক তুসজিনস্কি বলেন, “মানুষ ঐচ্ছিক নড়াচড়ার জন্য কর্টিকোস্পাইনাল অ্যাক্সন ব্যবহার করে। পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এই সিস্টেমের পুনর্গঠন প্রবণতার অনুপস্থিতির কারণে মানুষের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ থেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। তবে, এখন যেহেতু আমরা মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোটর সিস্টেম পুনর্গঠিত করতে সক্ষম হয়েছি, তাতে আমার ধারণা, এই পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়নের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।”
মানুষের ক্ষেত্রে এ চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত বলে জানান তিনি। এ প্রসংগে তিনি বলেন, “মানুষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে আরও কাজ বাকি আছে। অন্যান্য প্রাণির ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ এবং অন্যান্য বড় প্রাণির ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়াও এ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে উপযুক্ত ধরনের মানব নিউরাল স্টেম কোষের চিহ্নিত করতে হবে।”
এই আবিষ্কারের ফলে কর্টিকোস্পাইনাল নিউরন পুনরায় সৃষ্টির উপযোগী নয়- এমন একটি প্রচলিত ধারণা অমূলক প্রমাণিত হবে এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হবে বলে জানায় মিরর।