টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হলেন কাজী সালাউদ্দিন। দেশের এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের হাতেই ফুটবলের ভার আরও চার বছরের জন্য তুলে দিয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনের এই জয়কে ‘ফুটবল ও সত্যের জয়’ বলে মনে করছেন সালাউদ্দিন।
Published : 30 Apr 2016, 05:08 PM
রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে শনিবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সার ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খানকে হারান সালাউদ্দিন। ১৩৪টি ভোটের মধ্যে সালাউদ্দিন পেয়েছেন ৮৩টি, আশরাফের বাক্সে পড়েছে ৫০ ভোট। একটি ভোট বাতিল হয়।
বিকেল পাঁচটার খানিক পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন ফল ঘোষণা করলে পরাজয় মেনে নেন আশরাফ।
“আমি হার মেনে নিয়েছি। ৫০ ভোটও কম ভোট না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সালাউদ্দিন চাইলে আমি তাকে ফুটবলের উন্নয়নে সহযোগিতা করবো।”
জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন বলেন, “(এ জয়) ফুটবল এবং সত্যের জয়। ফুটবল এবং সত্যের জয় হবেই।”
গত দুই মেয়াদে সালাউদ্দিনের সফলতা যেমন আছে, ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। অতীত ভুলগুলো শুধরে সামনের চার বছরে ফুটবলকে কোথায় দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি দিয়েছেন কৌশলী উত্তর।
“কাজ করতে গেলেই সমালোচনা হয়; কাজ না করলে তো আর সমালোচনা হয় না। কি করব এবং আপনারা কি দেখতে চান, সে পরিকল্পনা আমি দুই দিন পরে বলব। সবে নির্বাচনটা শেষ হলো।”
“আমি যতটুকু পারি, আর যেটুকু কাজ বাকি ছিল, তা পুরোপুরি শেষ করবো।”
ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি বলেন, “আমি এতটুকু বলতে চাই, আজকে কাউন্সিলর ভোটার, যারা আমাদের নির্বাচিত করেছেন, ভোট দিয়েছেন, আমি তাদের আমার মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই, এতো দিনের নাটক, এতো কিছু; কিন্তু তারা প্রমাণ করে দিয়েছে ফুটবল সবচেয়ে বড়।”
২০০৮ সালে সালাউদ্দিন প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি হন। ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই ফরোয়ার্ড।
ঘরোয়া ফুটবলের কিংবদন্তি সালাউদ্দিন ক্লাব ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা কাটান ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডে; খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেও।
সংগঠক হিসেবেও ঘরে-বাইরে পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন। দুই দফায় বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালনের আগে ছিলেন সংস্থাটির সহ-সভাপতিও। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের টানা দুইবারের সভাপতি (বর্তমানেও দায়িত্বে আছে)। ফুটবলের বিশ্বসংস্থা ফিফার মার্কেটিং কমিটির সদস্যও ৬১ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলার।
গত দুই মেয়াদে সালাউদ্দিনের সেরা সাফল্য ফুটবলকে নিয়মিত মাঠে রাখা। কোটি টাকার সুপার কাপ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের আয়োজন, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আনা, সিলেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত ফুটবলার তৈরির আসর পাইওনিয়ার লিগ সচল রাখা, ঢাকার বাইরে একাধিক ম্যাচ আয়োজন তার এই দুই মেয়াদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
২৫ দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সালাউদ্দিন এবার সহ-সভাপতি হিসেবে পাশে পাচ্ছেন কাজী নাবিল আহমেদ, বাদল রায়, তাবিথ আওয়াল ও মহিউদ্দিন মহিকে। সর্বোচ্চ ৯২ ভোট পেয়ে নাবিল সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন; বাকি তিন জয়ী সহ-সভাপতির মধ্যে বাদল ৭৩টি, মহিউদ্দিন ৭২টি ও তাবিথ পেয়েছেন ৬৬টি ভোট।
চার সহ-সভাপতির মধ্যে নাবিল, বাদল ও তাবিথ পুনরায় নির্বাচিত হলেন। আগের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে থাকা যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবার নির্বাচন করতে পারেনি। সালাউদ্দিনের প্যানেল ‘সম্মিলিত পরিষদ’-এর প্রার্থী মহিউদ্দিন নতুন ঢুকলেন।
সদস্য পদে নির্বাচিত ১৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১৪ ভোট পেয়েছেন শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর। নির্বাচিত বাকিরা হলেন আমিরুল ইসলাম বাবু (১০৫), হারুন অর রশীদ (৯৪), ইলিয়াস হোসেন (৮৫), সত্যজিৎ দাস রূপু (৮৫), বিজন বড়ুয়া (৮৪), ইকবাল হোসেন (৮৪), ফজলুর রহমান বাবুল (৮৩), আরিফ হোসেন মুন (৮২), অমিত খান শুভ্র (৮১), জাকির হোসেন চৌধুরী (৭৮), মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম (৭৮), আবদুর রহিম (৭০), শেখ মোহাম্মদ আসলাম (৬৮) ও মাহফুজা আক্তার কিরন (৬৮)।
সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে ভোটাভুটির দরকার পড়েনি। ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদের নেতৃত্বে থাকা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইন-চার্জ লোকমান হোসেন ভূইয়া ও আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে পুনরায় থাকা নিশ্চিত হয়ে যায় সালাম মুর্শেদীর।
গত দুই মেয়াদে ঘরোয়া সূচি ঠিকঠাক অনুসরণ করতে এবং বারবার বিতর্কের জন্ম দেওয়া ফুটবলারদের দলবদলের প্রক্রিয়াকে পেশাদার পর্যায়ে নিতে পারেননি সালাউদ্দিন। এছাড়া জাতীয় দলের ব্যর্থতাও আছে। তাই সব মিলিয়ে কমিটিতে ‘কাছের লোক’ পেলেও সালাউদ্দিনের সামনের পথটা মসৃণ থাকছে না মোটেও।