সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে উপজেলা রক্ষাবাঁধে বার বার ধস নামায় নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
Published : 22 Jul 2017, 01:45 PM
সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাজার-ঘাট ও ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।
বাঁধে বার বার ধসের কারণ নির্ণয়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্মিত একই ধরনের বাঁধগুলোর ডাম্পিং ভলিউম ৬০ ঘন মিটার। অথচ চৌহালীতে নির্মাণাধীন বাঁধের ডাম্পিং ভলিউম হলো ৩২ ঘন মিটার।
“নদীর পানির প্রবল স্রোতে বাঁধের লঞ্চিং পয়েন্টের নীচে আরও অন্তত ৩০ মিটার গভীর থেকে মাটি সরে গেছে, যে কারণে উপর থেকে বাঁধের ব্লক ধসে গিয়ে ভাঙন দেখা দিচ্ছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টেন্ডারের দরপত্র মোতাবেক বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এবং কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি বলে দাবি জাকিরের।
“ধসের কারণ উদঘাটনে বুয়েটের দুজন বিশেষজ্ঞ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে একটি মিটিং করেছেন। শিগগিরই বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন।”
ঢাকার বিশেষজ্ঞ টিম এ প্রকল্পের ডিজাইন করেছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে লোকজনকে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভাঙন এলাকায় সংস্কার কাজ চলছে। এলাকাবাসীর চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে, গত ১৭ জুলাই সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকা এলাকায় ভেঙে যাওয়া একটি বাঁধ এলাকা পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌহালী উপজেলা রক্ষা বাঁধের ভাঙন প্রসঙ্গে বলেন, ওই বাঁধ রক্ষায় একটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। নদীর পানি শুকানোর পর শুস্ক মৌসুমে প্রকল্পটির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
তবে বাঁধটি কেন পুনর্নির্মাণ করার প্রয়োজন সে বিষয়টি পরিষ্কার করেননি মন্ত্রী।
বাঁধ প্রসঙ্গে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান বলেন, “বাঁধে নির্মান ক্রটি রয়েছে, নাকি ডিজাইনে ক্রটি আছে সেটা বুঝি না। চৌহালী উপজেলাকে রক্ষায় বাঁধটি শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। এ অঞ্চলের মানুষ ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন দেখা দেওয়ায় বাঁধের কয়েক গজ দূরে অবস্থিত নবনির্মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাজার-ঘাট ও ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে।
“বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি ভাঙনের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবোর সমন্বয়হীনতাও এজন্য দায়ী।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঝে মধ্যে এসে বাঁধটি দেখে যাচ্ছে। বড় কোনো ঝামেলা হলে হয়ত তারাও সহায়তা করবে, বলেন মামুন।
স্থানীয় খাসকাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, প্রকল্প কাজের গুণগত মান অনেক খারাপ, যে কারণে ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যেই চরজাজুরিয়ার ৩/৪টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে বাঁধের আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত চরজাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়, এসবিএম মহিলা কলেজ ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বাঁধটির বাকি অংশের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।
বর্তমানে নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছিল। এ অবস্থায় গত আড়াই মাসে বাঁধে নয় বার ধস নেমেছে। চলতি জুলাই মাসেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।