পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজনে হিমু ও মিসির আলীসহ জনপ্রিয় অনেক চরিত্রের স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছে ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা।
Published : 19 Jul 2017, 02:41 PM
২০১২ সালের ১৯ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান নেত্রকোণায় জন্ম নেওয়া পাঠকপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ; মৃত্যুর পর যিনি সমাহিত হন গাজীপুরে তারই প্রতিষ্ঠিত নুহাশ পল্লীতে।
জনপ্রিয় এই লেখকের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস ঘিরে নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়ি ও নুহাশ পল্লী- দুই জায়গাতেই চলছে বিভিন্ন আয়োজন।
বুধবার সকালে নুহাশ পল্লীতে লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন জানান, হুমায়ূনের স্মৃতি রক্ষায় সেখানে একটি স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আশা করছি, আগামী ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ওই জাদুঘরের একটা অংশ উদ্বোধন করা যাবে।”
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে বাংলাদেশে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমি আমার পক্ষ থেকে জীবন দিয়ে যতটুকু করবার সেটা আমি করব। কিন্তু আমি একা; আমার আহ্বানে একটি ক্যান্সার হসপিটাল করা সম্ভব নয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের একটা আহ্বানে সেটা সম্ভব ছিল।
“এক হুমায়ূন আহমেদের ডাকে বাংলাদেশে তার সমস্ত ভক্ত-পাঠক, তার দর্শকরা যেভাবে একত্রিত হত, আমার ডাকে সেটা হবে না। আমিতো আছিই, আমি সব সময় থাকব। ক্যান্সার হসপিটালের এ উদ্যোগটা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে নিতে হবে।”
এসময় অন্যদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ-শাওন পুত্র নিষাদ ও নিনিত, শাওনের মা তহুরা আলী, বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, হুমায়ুন আহমেদের বোন সুফিয়া হায়দার ও রোকসানা আহমেদসহ অসংখ্য ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে হুমায়ুন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
নূহাশপল্লীতে হিমু পরিবহন ও লেখক সমিতি
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের জনপ্রিয় চরিত্র হিমু ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের অর্ধশতাধিক সদস্য লেখকের প্রয়াণ দিবসে তার কবরে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার পথে ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং শোকবইতে ভক্তদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন তারা।
এছাড়া ‘হুমায়ূন আহমেদ প্রকাশনী’ এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্য ও কর্মকর্তারাও এদিন উপস্থিত হন নুহাশ পল্লীতে। তারা সেখানে প্রয়াত লেখকের কবর জেয়ারতের পাশাপাশি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সকালে আশপাশের মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা কোরআন তেলাওয়াত শুরু করে। মাদ্রাসা ও এতিম খানার শিক্ষার্থী ছাড়াও নুহাশ পল্লীতে আসা লেখকের ভক্তসহ প্রায় ৬০০ জনের দুপুরের খাবার আয়োজন করা হয় জানান তিনি।
জন্মস্থানে হুমায়ূন স্মরণ
পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ফয়জুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজের ঘরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার যে উপজেলায় জন্ম নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, সেই কেন্দুয়ায় গড়ে তুলেছিলেন শহীদস্মৃতি বিদ্যাপীঠ।
সেই বিদ্যাপীঠে হুমায়ূন প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি তার স্মরণে শোক র্যালিতে অংশ নেয় ছাত্রছাত্রীরা।
বেলা ১১টার দিকে স্কুল চত্বর থেকে র্যালিটি বের হয়ে স্থানীয় বঙ্গবাজার হয়ে ফের স্কুলে ফিরে শেষ হয়।
স্কুলের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে শোকের কালোব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও চক্ষুশিবির।
স্কুল চত্বরের আলোচনা সভায় হুমায়ূন আহমেদের চাচা আলতাবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান, শিক্ষক শরীফ আনিছ আহমেদসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
হুমায়ূন আহমেদকে নতুন প্রজন্মের জানা দরকার মন্তব্য করে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ তিনি লালন করতেন এবং দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে অনেক কাজ করে গেছেন… আমরা চাই, হুমায়ূন স্যারের আদর্শকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে।”
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবস ঘিরে কেন্দুয়া উপজেলা সদরেও ছিল নানা আয়োজন।
র্যালিটি উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হয়ে সদরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া, ইউএনও মোতাশিমুল ইসলাম, চর্চা সাহিত্য আড্ডার উপদেষ্ঠা ইসলাম উদ্দিন বাউল, হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি মজিবুর রহমান ও চর্চা সাহিত্য আড্ডার সমন্বয়কারী রহমান জীবন।
ফরিদপুরে হুমায়ূন মৃত্যুবার্ষিকী পালন
মৃত্যুবার্ষিকীতে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা হয়েছে ফরিদপুরেও।
বেলা ১১টার সময় ফরিদপুর শহরের কমলাপুরের রাইট ট্রাক স্কুলে আলোচনা সভার আয়োজন করে সাহিত্য পত্রিকা ‘উঠোন’।
ফরিদপুর হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি সংঘের সভানেত্রী শামিমা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনায় হুমায়ূন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক হাসিনা বানু, অধ্যাপক আলতাব হোসেন, সাংবাদিক মফিজ ইমাম মিলন, মৃধা রেজাউলসহ অন্যরা।
পরে হুমায়ূন আহমেদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।