পদ্মার ভাঙ্গনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
Published : 02 Jul 2017, 04:34 PM
এই দুই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি, জমি, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, সেতু কালভার্ট ও পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ঝুঁকির মুখে রয়েছে হাজার হাজার একর জমি, শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা ও রাস্তাঘাট।
ভাঙনে ভিটে-মাটি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত মানুষ উঁচু জমিতে বা রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছে আশ্রয়ের জন্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেবল নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর এলাকর আট কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার বাঁধ রয়েছে। বাকি এলাকা এখনও অরক্ষিত।
জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন বেপারী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত ১০ দিনে নড়িয়ার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি, চেরাগ আলী মাদবর কান্দি ও জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর বেপারী কান্দি, ইয়াকুব বেপারী কান্দি, আইন উদ্দিন বেপারী কান্দি, মমিন খালাসী কান্দি, মাদবর কান্দি, ইউসুফ বেপারী কান্দি, বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচরসহ তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘর বাড়ি, জমিজমা, মসজিদ মাদ্রাসা পাকারাস্তা, বড় বড় সেতু ও স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই জেলার অংশ মানচিত্র থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ভাঙন রোধে স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মাণের, এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদেরকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
কিন্তু ভাঙন থেমে গেলে তাদের প্রতিশ্রুতি আর ঠিক থাকে না বলে অভিযোগ এই জনপ্রতিনিধির।
সরেজমিনে নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত মানুষ সহায় সম্বল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটোছুটি করছে। রাতের বেলায় পানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। কোন সময় তাদের সবকিছু ভাসিয়ে নেওয়ার অতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জাবেদ ঢালী বলেন, “পদ্মা নদী থেকে আমার বাড়ি ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। পদ্মা নদীর ভাঙনে এবার আমার বাড়িও ভাঙতে শুরু করেছে। গত ১০ দিনে আমার বাড়িঘর পদ্মায় প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব ভেবে পাচ্ছি না।”
কুণ্ডেরচর এলাকার খোকন বেপারী বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মাবেষ্ঠিত কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যায়। সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেঁড়িবাধ করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করবে।
“এবার বর্ষার শুরুতেই ভঙন দেখা দিয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কেউ এসে আমাদের খবর নেয়নি।”
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমীন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় না থাকার কারণে ভাঙনের খবর পেতে দেরি হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, “ভাঙনের ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য আমি পাইনি। খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”