মৌলভীবাজারের চারটি উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্রায় এক মাস ধরে পানির নিচে রয়েছে; কুশিয়ারা নদীর পানিও প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।
Published : 30 Jun 2017, 12:08 PM
অনেক উঁচু এলাকায় এই প্রথম পানি দেখে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয়চন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী বলছেন, প্রায় দৈনিক বৃষ্টি হচ্ছে। ভারত থেকেও নেমে আসছে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি।
“বিপুল এলাকার পানিপ্রবাহের একমাত্র পথ কুশিয়ারা নদী। নদীর ক্ষমতার চেয়ে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় দুপাশ প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা ছাড়া হাকালুকি হাওর এলাকার এই পানিপ্রবাহের অন্য কোনো রাস্তার নেই।”
কুশিয়ারা প্রায় এক মাস ধরে প্রায়ই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালেও বিপৎসীমার ওপরে ২৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী বিজয়চন্দ্র শঙ্কর।
বিরাটাকার এই সেচযন্ত্রটি কাওয়াদিঘি হাওরের অতিরিক্ত পানি কুশিয়ারা দিয়ে অপসারণ করে জানিয়ে প্রকৌশলী বিজয়চন্দ্র বলেন, পানির চাপ অতিরিক্ত হওয়ায় সেচযন্ত্রটির পাইপ অচল হয়ে পড়েছে।
এদিকে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র কামরান আহমদ এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তার কথা জনিয়ে বলেন, “বড়লেখা শহর অনেকটা উঁচু এলাকায়। এখানে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে তা আমি ভাবতেও পারিনি।”
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন এ উপজেলার শুজানগর, তালিমপুর ও বর্নি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেকই পানির নিচে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমৈল, খাদিপুর, জয়চণ্ডী, ভাটেরা ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ৭০-৮০টি গ্রাম এবং উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণসহ কয়েকটা এলাকা পানিবন্দী থাকার খবর দিয়েছেন ইউএনও চেধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী।
জুড়ি উপজেলার ইউএনও মিন্টু চেধুরী উঁচু এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
“গত আড়াই মাস হয়েছে আমি এখানে জয়েন করেছি। এ সময়ের মধ্যে চারবার বন্যা হয়েছে। তিনবারই অল্প সময়ের মধ্যে চলেও গেলেও এবার আর যাচ্ছে না। এবারের অবস্থা খুব খারাপ। আমি ডিঙ্গি নৌকায় চলাচল করছি। সবার অবস্থাই একই রকম।”
জুড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গুলসানারা মিলিও কয়েক দিন ধরে গাড়ি রেখে নৌকা চড়ে অফিস করছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
তিনি বলেন, “এত পানি দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। ২৫ দিন ধরে উপজেলা শহরের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। শহরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছে জুড়ি শহর ও শহরতলির মানুষকে।”
এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব সবচেয়ে প্রকট।
এ ব্যাপারে বড়লেখা ও জুড়ি আসনের সংসদ সদস্য এম সাহাব উদ্দিন বলেন, কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েছে মৌলভীবাজার। ইতোমধ্যেই সব উপজেলায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও দেওয়া হবে।
ছবিগুলো জুড়ি উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তোলা।