সিরাজগঞ্জে চিকিৎসক ও সেবিকাকে ‘খাবারে বিষ দিয়ে হত্যা’

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সেবিকাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ খাবারে বিষ দিয়ে হত্যা করেছেন বলে ওই চিকিৎসকের বাড়ির এক কর্মচারী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।  

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 10:15 AM
Updated : 8 May 2017, 10:18 AM

কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বাসার (অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী লাকি খাতুন শনিবার এ জবানবন্দি দেন বলে জানান সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওহেদুজ্জামান।

লাকি কাজীপুর উপজেলার বেড়ী পোটল গ্রামের জহরুল ইসলামের স্ত্রী।

এদিকে লাকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগে আরও দুই কবিরাজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এরা হলেন-সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের কবিরাজ আশরাফ আলী ও কাজিপুর উপজেলা টিকরাভিটা গ্রামের কবিরাজ তমসের আলী। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওহেদুজ্জামান বলেন, “গত ৩ মে সন্ধ্যায় লাকিকে আটকের পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে খাদ্যে বিষ প্রয়োগের কথা স্বীকার করে।

এরপর শনিবার তাকে সিরাজগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।”

গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, “লিখিত জবানবন্দিতে লাকি খাতুন বলেন, ‘চিকিৎসক মনিরুজ্জামান তার সঙ্গে ‘অনৈতিক সর্ম্পক’ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফেরদৌসের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে কৌশলে তরকারির মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেন।

এ কাজে আটক দুই কবিরাজরা তাকে কাজে সহযোগিতা করে বলে জবানবন্দিতে লাকি জানিয়েছেন বলে জানান ওসি ওহেদুজ্জামান।    

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে লাকিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে লাকির তথ্যের ভিত্তিতে শনিবারই কবিরাজ আশরাফ ও তমসেরকে আটক করা হয়।

ওসি ওহেদুজ্জামান জানান, তাদের একই আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়; শুনানি শেষে বিচারক দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৫ এপ্রিল কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের প্রধান সহকারী আলমগীর হোসেনের বাসায় দাওয়াত খেতে যান। দাওয়াতে উপস্থিত থাকতে না পারায় মনিরুজ্জামান, জোবাইদা ও আলমগীরের খাবার কর্মচারীরা অফিসে নিয়ে যান।

সেখানে খাবার খেয়ে তারা তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনিরুজ্জামান ও জোবেদা মারা যান।

ওই ঘটনার পর কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনেও খাদ্যে বিষ ক্রিয়ায় চিকিৎসক ও সেবিকার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন মঞ্জুর রহমান জানান।