জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ২০১৬-১৭ সময়ের জন্য ঘোষিত নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে সাংবাদিকদের একটি অংশ।
Published : 05 May 2017, 09:11 PM
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন।
এর আগে তারা ‘নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট’ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে উপাচার্যকে সময় বেঁধে দেন।
বুধবার রাতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়াই লিখিত ঘোষণায় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী কালের কন্ঠের জাবি প্রতিনিধি তানজিদ বসুনিয়া ও দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকমের জাবি প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ শুভকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৬-১৭ সেশনের ১১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ও নতুন কমিটির সদস্যদের দাবি, ‘যথাযথ’ প্রক্রিয়া মেনেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম (শামীম রেজা), প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন এবং আইন ও বিচার বিভাগের প্রভাষক ফেরদৌস রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগটি পাঠ করে শোনান জাবি প্রেসক্লাবের ২০১৫-১৬ সেশনের যুগ্ম-সম্পাদক জুনায়েদ আহমেদ।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাবি প্রেসক্লাবের গত কমিটির (২০১৫-১৬ সেশনের) কার্যকরী সদস্য মো. মুসা ও আবু সায়েম এবং গত কমটির সদস্য দৈনিক জনকণ্ঠের জাবি প্রতিনিধি দীপঙ্কর দাস।
উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, “ক্লাবের (প্রেসক্লাব) গঠনতন্ত্রকে তোয়াক্কা না করে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এ কমিটি ঘোষণা করেছে। কতিপয় শিক্ষক নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ওই কমিটিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সবকিছু উপাচার্যের নির্দেশেই করা হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।”
“কিন্তু জালিয়াতির বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এই অবৈধ কমিটি ঘোষণার সাথে আপনার (উপাচার্য) সংশ্লিষ্টতা আমাদের ভাবিত করে।”
“প্রেসকালাবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আপনাকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা তথা শনিবার বেলা ২টার মধ্যে এই অবৈধ কমিটি বাতিল করে সমস্যা সমাধান করার অনুরোধ করছি। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
দৈনিক জনকণ্ঠ জাবি প্রতিনিধি দীপঙ্কর দাস বলেন, নির্বাচনে নিজ পক্ষের ভোটার বাড়াতে গত কামটির সাধারণ সম্পাদক তানজিদ বসুনিয়া সদস্য হওয়ার শর্ত পূরণ করেনি এমন অন্তত ১৫ জনকে অবৈধভাবে সদস্য বানান।
“এভাবে জালিয়াতি করে ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন না করতে নির্বাচন কমিশন ও উপাচার্যকে অনুরোধ করেছিলাম আমরা। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য নির্বাচন কমিশনকে সবার সাথে কথা বলে ৫ মের মধ্যে সমস্যা সমাধান করতে বলেন।”
“কিন্তু গতকাল রাতে হঠাৎ করে কোনো ঘোষণা ছাড়া সংবিধান না মেনে এক পাক্ষিকভাবে একটি কমিটি ঘোষণা করে দেয় নির্বাচন কমিশন। তাই এ বিষয়ে উপাচার্যের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আমরা আজ আল্টিমেটাম দিয়ে এসেছি।”
অভিযোগ বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পরদিন (বৃহস্পতিবার) পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির উপদেষ্টা সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে ফেসবুক স্টাটাসে তিনি লেখেন, “অনিবার্য কারণবশত’ প্রেসক্লাবের উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলাম।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ ঘটনায় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে সংকট কাটিয়ে উঠার পরামর্শ দিয়েছি। এখানে যা কিছু ঘটেছে তা তিন সদস্যবিশিষ্ট স্বাধীন কমিশনের ব্যাপার। এর সাথে উপাচার্যকে দায়ী করাটা অযৌক্তিক।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনার ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল ইসলামকে (শামীম রেজা) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনিও ফোন ধরেননি।
অপর দুই নির্বাচন কমিশনার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন এবং আইন ও বিচার বিভাগের প্রভাষক ফেরদৌস রহমান উভয়ই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবিধান না মানার অভিযোগ সত্য নয়। প্রেসক্লাবের সংবিধান মেনে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধান ভঙ্গ করা হয়নি।
তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ছাড়া কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের জবাবে এই দুই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবকিছু সংবিধান মেনেই করা হয়েছে।
এর বেশি কিছু বলতে তারা অপারগতা জানান।