সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় এক পরিবারের সদস্যদের প্রায় সবার আচরণে অল্প সময়ের মধ্যে ‘অস্বাভাবিকতা’ ছড়িয়ে পড়ার খবরে আলোচনা তৈরি হয়েছে জেলা শহরে।
Published : 07 Mar 2017, 07:16 PM
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করেও বাসা থেকে বের হতে রাজি করাতে পারেননি। কাউকে কাউকে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। এক কবিরাজ ওই বাড়িতে হাজির হয়ে শুরু করেছেন ঝাড়ফুঁক।
পরিবারের সবার একে একে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ হয়ে পড়ার খবরে সারাদিন উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে থাকছে প্রসাদপুর গ্রামের রহমত বিশ্বাসের বাড়িতে।
“তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন। কখনও কখনও মারমুখী আচরণ করছে। পুলিশের লোক কথা বলতে গেলে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ইউএনও বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাড়ির সুস্থ লোকজন বলছে, বাড়ির বাইরে পাঠালে তাদের সমস্যা আরও বাড়বে।”
গৃহকর্তা রহমত বিশ্বাসের বয়স ৬৫ বছর। পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে ও এক পুত্রবধূসহ ১৩ সদস্যের পরিবার তার।
“আমার ছেলে হায়দার তাকে আনতে যায়। মেয়েটা হায়দারকে বলে, ‘আমাকে বাপের বাড়ি নিয়ে গেলে তোরা সবাই পাগল হয়ে যাবি।’ নয় দিন আগে ওকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরপর আমার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি সবাই একে একে পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
সোমবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক ছেলের হাত শেকলে বাধা। আরেক ছেলে উঠানে পাটি পেতে ঘুমাচ্ছেন। তার পায়েও লোহার শেকল, মুখ দিয়ে কষ গড়াচ্ছে। বাড়ির বাইরে ভিড় করে আছে বহু মানুষ।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রহমতের পরিবার আগে খুব গরিব ছিল। বছর তিনেক আগে তারা গুপ্তধন পেয়ে বড়লোক হয়ে যায়। এখন তার প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।”
তবে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লিয়াকত গাজী ওই পরিবারের ভাগ্য বদলের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে বলে মনে করেন না।
তিনি জানান, রহমত একসময় দিনমজুর ছিলেন। পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করার পর তাদের দিন বদলাতে শুরু করে।
“রহমত আর তার ছেলেমেয়েরা খুব পরিশ্রমী আর সৎ। তারা কঠোর পরিশ্রম করেই ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আগে বাড়িতে মাটির ঘর ছিল। বছর তিনেক আগে আধা-পাকা ঘর তুলেছে।”
এক কবিরাজ চিকিৎসার নামে ‘ঝাড়ফুঁক’ চালাচ্ছে জানিয়ে পরিবারটিকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এই ইউপি সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা একজন চিকিৎসককে পাঠিয়েছিলাম। পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে আসতে রাজি হননি। আমরা ভালোমতো পর্যবেক্ষণ না করে কিছু বলতে পারছি না।”