রাগীব আলীর প্রতারণার মামলার রায় পিছিয়েছে

ছেলে আব্দুল হাই অসুস্থ হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই সপ্তাহের জন্য পেছানো হয়েছে রাগীব আলীর প্রতারণা মামলার রায়।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 05:04 PM
Updated : 23 Feb 2017, 05:04 PM

বৃহস্পতিবার রায় পেছানোর নির্দেশনা দেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে একই আদালত আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি মাহফুজুর রহমান জানান, রাগীব ছেলে আব্দুল হাইকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ উল্লেখ করে রায় স্থগিতের জন্য আবেদন করেন ইউসুফ খান নামের এক ব্যক্তি। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত রায় পেছানোর নির্দেশনা দেয়।

“সেই নির্দেশনা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এলে আদালত দুই সপ্তাহের জন্য রায় ঘোষণা স্থগিত করে। এই সময়ের মধ্যে আব্দুল হাইকে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে জানান এপিপি মাহফুজুর।

তিনি জানান, দুপুরে এই মামলার রায়ের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছিল আদালত। মামলার ৩৩ সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রাগীব আলীর ছেলের আইনজীবী আব্দুল্লাহ কাফি বলেন, “আব্দুল হাই মানসিকভাবে সুস্থ নন। তিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করার মতো অবস্থায় নেই। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে এনে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন জানাই।”

বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমদ আবেদন আমলে নিয়ে মামলার কার্যক্রম দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বলে কাফি জানান।

১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে তারাপুর চা-বাগানের ৪২২ দশমিক ৯৬ একর দেবোত্তর সম্পত্তি রাগীব আলী দখল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

১৯৯৯ সালের ২৫ অগাস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা বাগান নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। পরে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

উপ-কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশে তারাপুর চা-বাগান অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণামূলকভাবে লিজি হিসেবে দখলে রাখার জন্য রাগীব আলীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয়বিধ মামলা করতে বলে।

প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার এই ভূ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন সিলেট সদরের তৎকালীন ভূমি কমিশনার এসএম আব্দুল কাদের।

এছাড়া পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি দখল করার অভিযোগে অপর মামলায় রাগীব আলী, তার ছেলে আব্দুল হাই, মেয়ে রেজিনা কাদির, জামাতা আব্দুল কাদির, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দেওয়ান আব্দুল মজিদ ও চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে আসামি করা হয়।

তদন্ত শেষে গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি ওই চা-বাগানের বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব ও তার ছেলে হাইকে চারটি ধারায় মোট ১৪ বছর কারাদণ্ডের রায় দেয় আদালত।

স্মারক জালিয়াতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে সিলেটের জজ আদালতে আপিল আবেদন দাখিল করেছেন রাগীব ও তার ছেলে হাই। আগামী ৮ মার্চ আপিল গ্রহণের বিষয়ে শুনানির দিন ঠিক করেছে আদালত।