গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সন্দেহে গ্রেপ্তার ‘রাজীব গান্ধী’ এক সময় গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়িতে থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাতেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
Published : 14 Jan 2017, 11:30 PM
এই কারণে বছর দশেক আগে গাইবান্ধার সাঘাটায় পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বাড়ি করেছিলেন বলে দাবি করেন তার এক ভাই।
বাংলা ভাই-শায়ক আবদুর রহমানের পুরনো জেএমবি হয়ে নিও জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীতে পরিণত হওয়া ‘রাজীব গান্ধী’র আসল নাম জাহাঙ্গীর আলম। শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জাহাঙ্গীরের পৈত্রিক বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম রাঘবপুর গ্রামের ভূতমারা ঘাট এলাকায়।
ওই এলাকার মৃত ওসমান গণি মণ্ডলের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট জাহাঙ্গীর নিও জেএমবিতে ‘রাজীব গান্ধী’ নামের পাশাপাশি সুভাস, শান্ত, টাইগার, আদিল, জাহিদ এই রকম কয়েকটি ছদ্ম নাম নিয়ে চলতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জাহাঙ্গীরের নয় বছরের এক ছেলে রয়েছে বলে জানান তার মা রাহেলা বেগম।
শনিবার বিকালে ভূতমারা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের দুটি ঘরে জাহাঙ্গীরের ছেলে ওসায়িদকে নিয়ে থাকছেন রাহেলা।
নাতিকে নিয়ে থাকলেও প্রায় সাত থেকে আট বছর ধরে ছোট ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ নেই দাবি করে রাহেলা বলেন, “তিন থেকে চার বছর আগে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সাঘাটা উপজেলা সদরের এক কওমি মাদ্রাসায় ওসায়িদকে ভর্তি করে আমার কাছে রেখে চলে যায়।”
এরও কয়েক বছর আগে থেকে বাড়ির সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ জাহাঙ্গীর ওই সময় পাশের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে জমি কিনে নতুন বাড়ি করেন বলে জানান তার মা।
জাহাঙ্গীর বাড়ি করার অনেক আগে থেকেই গোবিন্দগঞ্জে বাড়ি করে থাকেন তার বড় দুই ভাই আবু তাহের (৪৮) ও আব্দুল আলিম (৩৫)।
এর মধ্যে তাহের গোবিন্দগঞ্জ সদরে বাড়ি করলেও আলিম বাড়ি করেন উপজেলার মালঞ্চা গ্রামে, যেখানে পরে জাহাঙ্গীরও জমি কিনে বাড়ি করেন।
জাহাঙ্গীরের পৈত্রিক বাড়ি সাঘাটার ভূতমারা গ্রামে এক সময় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের পদচারণা ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।
সেই সময় জেএমবিতে জড়িয়ে পড়া জাহাঙ্গীর নিজের গ্রামেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে বছর দশেক আগে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে গোবিন্দগঞ্জে বসবাস শুরু করেন বলে দাবি করেন তার বড় ভাই তাহের।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাঙ্গীর গ্রামেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে প্রায় ১০ বছর আগে ওই বাড়ি ছেড়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে এসে বসবাস শুরু করি।”
সেই থেকে গোবিন্দগঞ্জ সদরে কাঠের ফার্নিচার ও গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা শুরু করেন বলে জানান তাহের।
এরপর ছয় থেকে সাত বছর আগে তার ছোট ভাই আলিম মালঞ্চা গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করে জানিয়ে তিনি জানান, তার দুই থেকে তিন বছর পর জাহাঙ্গীরও এখানে (মালঞ্চা গ্রামে) এসে জমি কিনে বাড়ি করে।
নতুন বাড়িতে জাহাঙ্গীর তার পরিবার নিয়ে মাত্র বছরখানেক ছিলেন জানিয়ে তাহের বলছেন, “এখান থেকে চলে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী ও আমাদের বলেছিল, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার জন্য বগুড়া চলে যাচ্ছে।”
আলিমের পর জাহাঙ্গীর মালঞ্চা গ্রামে বাড়ি করলেও তা পাশাপাশি নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের ও বাড়ির কোনো সম্পর্ক নেই।”
এদিকে জাহাঙ্গীরের পৈত্রিক বাড়ি ভূতমারা গ্রামের এক হাফিজিয়া মাদ্রাসার হুজুরকে তার জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সহযোগী হিসেবে সন্দেহ করছেন স্থানীয়রা।
ভূতমারা বাজারে জাহাঙ্গীরের একাধিক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বছর দশেক আগে গ্রামের হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আব্দুর রহমান ওরফে এরশাদ নামে এক হুজুর চাকরিতে যোগ দেন।
তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের খুব ভালো সর্ম্পক ছিল, নিয়মিত উঠাবসাও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি জঙ্গি ধরাধরি শুরু হলে ওই হুজুর ভূতমারা গ্রাম ছেড়ে চলে যান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মুক্তমনা লেখক, শিক্ষক, পুরোহিতসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হামলার ঘটনা শুরুর পর এ ধরনের ২২টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ‘রাজীব গান্ধী’ যে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত তার প্রমাণ পাওয়া যায় পুলিশের দেওয়া তথ্যেও।
পুলিশের ভাষ্য, উত্তরাঞ্চলের সবকটি হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ‘রাজীব গান্ধী’ ওরফে জাহাঙ্গীর পুরনো জেএমবিরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
তাকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর ২০০৪ সালে পুরনো জেএমবির শূরা সদস্য ডা. নজরুল ইসলামের সহযোগী ছিলেন।
এছাড়া ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট সারাদেশে বোমা হামলার সময় বগুড়ায় সংগঠনটির দায়িত্বে থাকা আবদুল আউয়ালের পাচক হিসেবে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর।