ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
Published : 31 Oct 2016, 12:49 PM
স্থানীয় বারোয়ারি মন্দিরের পুরোহিতসহ দুই ব্যক্তির দায়ের করা মামলা দুটিতে অজ্ঞাতপরিচয় সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম জানান।
তিনি বলেন, দুটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে সোমবার সকালে। একটি মামলা করেছেন দত্তবাড়ির কাজল জ্যোতি। অন্যটির বাদী বারোয়ারি মন্দিরের পুরোহিত নির্মল চৌধুরী।
“প্রত্যেক মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
রোববার হামলা-ভাঙচুরের পর আটক নয়জনকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে আবদুল করিম জানান।
ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নাসিরনগরে ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
পাশের জেলা হবিগঞ্জের মাধবপুরেও দুটি মন্দিরে হামলা হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান।
ওই ঘটনার পর পাশাপাশি দুটি উপজেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও আতঙ্ক কাটছে না বলে হিন্দু নেতারা জানিয়েছেন।
শুক্রবার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেইসবুক পাতায় একটি পোস্ট নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান।
ফেইসবুকে রসরাজ ‘ইসলাম অবমাননা করে’ পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তাকে শনিবার আটক করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় একই কর্মসূচি।
রসরাজের শাস্তির দাবিতে একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। আর কয়েকশ লোক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, অবরোধ থেকে একদল লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমশুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দির গুঁড়িয়ে দেয়।
উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া পাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়াতেও হামলা হয়।
পূজা উদযাপন পরিষদের নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেন, মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শর বেশি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এ সময় কয়েকজন পূজারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি আদেশ দেব জানান।
এ বছরের শুরুতে এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের তাণ্ডবে সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।