র্যাব পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর ১১ দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন পাবনার তিন সহোদর ও তাদের দুলাভাইসহ পাঁচজন।
Published : 23 May 2016, 01:09 PM
র্যাব এ সম্পর্কে কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।
নিখোঁজরা হলেন খাগরবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল করিম সরদারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৯), এরশাদ সরদার (৩২) ও টিক্কা সরদার (৩৫), থানাপাড়ার জুলু প্রামাণিকের ছেলে হাফিজুর রহমান রনি (২৬) এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সাভার গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারের ছেলে দুলাল হোসেন, যিনি তিন সহোদরের দুলাভাই।
ফরিদপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে বলেন, গত ১২ মে নিজ বাড়িতে ঘুমানোর সময় ভোর রাতে র্যাবের পোশাক পরা পাঁচ-ছয়জনসহ ২৫-৩০ জনের সশস্ত্র দল বাড়ি ঘেরাও করে তিন সহোদরকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়।
“অল্প সময়ের ব্যবধানে থানাপাড়ার রনিকেও একই কায়দায় তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা। পরে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থেকে তুলে নিয়েছে তিন সহোদরের দুলাভাই দুলাল হোসেনকে।”
দুলাল ও রনির নামে থানায় একটি করে মামলা থাকলেও করিম সরদারের তিন ছেলের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই বলে ওসি জানান।
ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খাগরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, এই গ্রামের আব্দুল করিমের তিন ছেলে পুরোদস্তুর কৃষক ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য।
তবে আওয়ামী লীগ পরিবারের কী ধরনের সদস্য সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
রোববার সরজমিনে খাগরবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। নিখোঁজ তিন ভাইয়ের স্ত্রীরা সন্তানদের নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করছেন।
মা ভানু খাতুন পাগলের মতো ঘুরছেন আর তিন ছেলের বউ আর নাতি-নাতনিদের কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছেন।
নিখোঁজ টিক্কার স্ত্রী জাহেদা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ঘটনার দিনে ভোরে ধান সিদ্ধ করছিলাম। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ২৫-৩০ জন লোক এসে টিক্কার খোঁজ করতে থাকে। কয়েকজনের পরনে কালো পোশাক ছিল।
“তারা অনেক বকাঝকা করে আমার স্বামীসহ দুই দেবরকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমাদের কোনো কথা বলতে দেয়নি তারা। আপনারা কারা, কেন নিয়ে যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।”
নিঁখোজ সহোদর সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী জুলেখা খাতুন বলেন, “আমার স্বামী গত তিন বছরে একদিনের জন্যেও রাতে বাইরে থাকেনি।”
তিনি কান্নাকাটি করতে করতে তার ৯ মাসের মেয়ে সিনথিয়ার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানান।
নিঁখোজ অপর সহোদর এরশাদের স্ত্রী দুলালী খাতুন গণমাধ্যম-কর্মীদের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।
“আমার নাবালক এই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব। আমার স্বামী-দেবররা কোনো দিন কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কিছু করেননি। তাদের কেন নিয়ে গেল।”
অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস ও নছিমনে করে এসেছিল বলে জানান তাদের প্রতিবেশী ও গ্রামপ্রধান ইদ্রিস আলী মোল্লা।
“তাদের আর্তচিৎকারে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে এসে দেখি, তিন ভাইকে নিয়ে কালো পোশাক পরা লোকজন সাদা মাইক্রোবাসে এবং অবশিষ্ট লোকজন একটি নছিমনে করে চলে যাচ্ছে।”
নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশ সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, সহোদরদের ফুফাত ভাই আকরাম হোসেন, গ্রামের পল্লিচিকিৎসক আঞ্জুমান আরা ও গ্রামপ্রধানসহ স্থানীয়রা।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, নিঁখোজদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অবহিত করার পর থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে।
র্যাব-১২-এর পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, নিখোঁজ পাঁচ ব্যক্তি সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই।