গত বারো বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
Published : 23 Apr 2016, 08:24 PM
এরা হলেন অর্থনীতির অধ্যাপক ইউনুস, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যার অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ, সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম এবং ইংরেজির অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
সর্বশেষ রেজাউল করিম সিদ্দিকী নিহত হন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার কাছে।
হত্যার ধরন দেখে কোনো জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় খুন হন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম।
লালন ভক্ত শফিউল ইসলাম মুক্তমনা ও প্রগতিশীল আদর্শের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন।
তার বিভাগীয় সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধাপক শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একজন সদস্য। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল থেকে তিনি একাধিকবার প্রার্থী হয়ে শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিভাগীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
শফিউল হত্যার ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ফেইসবুক পেইজে হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ হত্যা মামলায় কয়েকবার তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে ১১ জনকে আসামি করা হয়।
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটনো হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন।
দুই দিন পর তার বাসার পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
তাহের হত্যার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জামায়তপন্থি হিসেবে পরিচিত এক শিক্ষক, এক শিবিরনেতাসহ চারজনের মৃতুদণ্ড হয়। পরে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাই কোর্ট দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
এরা হলেন ড. তাহেরের সহকর্মী একই বিভাগের শিক্ষক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রাতভ্রমণে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে নিজ বাসভবনের অদূরে কুপিয়ে আওয়ামীপন্থি অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ইউনুসকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় তার ছোট ভাই আব্দুল হালিম বাদী হয়ে ওইদিন নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১০ সালে এ হত্যা মামলায় দুই জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয় রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ডের রায় স্থগিত করে পুনঃবিচারের আদেশ হয়।
পুনঃবিচারে দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
দুই আসামি হলেন সফিউল্লাহ ও শহীদুল্লাহ। শহীদুল্লাহ ওরফে মাহবুব মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের বড় ভাই রফিকুল ইসলামের জামাতা। তার বাড়ি নওগাঁ সদর থানার সারকডাঙ্গা গ্রামে। আর সফিউল্লাহ ওরফে তারেকের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইটাগাছা গ্রামে।