ম্যানেজার ভ্যালেন্টাইন ডে’র শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে কিছু শেয়ার করার জন্য ফ্লোর ছেড়ে দিল। সবাই তাদের পরিকল্পনা ছাড়াও কে কী গিফট পেয়েছে বা পাবে তা খোলামেলাভাবে অন্যদের জানালো।
একজন হাসতে হাসতে বললো, গত কয়েক বছর আগে এক ভ্যালেন্টাইন ডে’তে সে তার এক মেয়ে কলিগের জন্য কুরিয়ার মেইল থেকে রিসিভ করা একগুচ্ছ চমৎকার গোলাপের স্টিক ডেস্কে পৌঁছে দিতে গেলে সে বলেছিলো, “প্লিজ, থ্রু ইট ইন দি বিন।”
তার কথা শুনে বেচারা পুরো ভড়কে গিয়েছিলো।
পরে জানা গেল মেয়ে কলিগটির সাথে তার ফিয়াসের (বাগদত্তার) তিনদিন আগে ব্রেক-আপ হয়ে যাওয়ায় মেয়েটা রাগ করে ফুলগুলো ফেলে দিতে বলেছে। কিন্তু অভাগা ফিয়াসে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কুরিয়ার সার্ভিসে অর্ডার বুক করে রেখেছিলো।
আমার ম্যানেজার মধ্যবয়সী মহিলা। তিনি বললেন, “মেয়েরা যতই স্টাবলিসড হোক কিংবা বড় চাকরি করুক না কেন তারা সবসময়ই তাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে গিফট আশা করে।
“তোমরা ছোট একটা ফুল দিয়ে তোমার ভালোবাসার খুঁটিটাকে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারো। এদেশে মেয়েরা বাইরে কাজ করে ঘরে এসে রান্নাবান্নাসহ সংসারে সব কাজে হাত লাগায় কিন্তু ছেলেরা বাইরে থেকে ফিরেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে অতি সামান্য গিফট দিয়েও তোমার স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখতে পারো।”
নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বললেন, “আমার স্বামী সিডনির বাইরে আছে। সে সব সময় আমাকে এই দিন ছাড়াও ঠুনকো যে কোন উছিলায় ফুল কিংবা ছোটখাটো গিফট করে।”
আমিও ম্যানেজারকে দেখেছি তার লাঞ্চ ব্রেকে সে উলিজ থেকে প্রায় প্রতিদিন বাজার করে রাখে। একদিন আমাকে ডেকে বললেন, “আজ রাতে আমার স্বামী তার কয়েকজন বন্ধুকে আমাদের বাসায় খেতে বলেছে। ভেড়ার মাংস তার খুব পছন্দ। আমি তাকে মাংস রান্না করে সারপ্রাইজ দিতে চাই। তুমি কি আমাকে কোন বুচার শপের ঠিকানা দিতে পারো?”
আমি বললাম, “ঠিকানা দিলেও তুমি ভালো মাংস চিনে কিনতে পারবে না। বরং টাকা দাও আমি তোমাকে কিনে এনে দিব।”
আমি সাধারণত অন্যের উপদেশ কানে নেই না। কিন্তু আজ সকালের মিটিং-এ ম্যানেজারের কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে গেঁথে গেল।
বিকালে ফেরার পথে ফুল কিনতে দোকানে গেলাম। দেখলাম আমার পাশেই এক বৃদ্ধা ফুল কিনছেন। সারাদিনের ধকলে দোকানে থেকে গোলাপের পাপড়িগুলো কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম।
পাশের থেকে বৃদ্ধা তার গোলাপি লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটে মুচকি হেসে আমাকে বলল, “মে এই হেল্প ইউ?”
আমি আরও দ্বিধায় পড়ে গেলাম। তারপর কারণটা তাকে বুঝিয়ে বললাম।
সে এবার তার হাসি চারিদিকে ছড়িয়ে সবজান্তার ভঙ্গিতে বলল, “তোমার ফিয়াসের কাছে গোলাপের পাপড়ির চেয়ে তোমার ইচ্ছেটা আর ভালবাসাটাই বেশী মূল্যবান। ডোন্ট কনফিউজড ইয়াং ফেলো, গো এহেড।”
আমি বাসায় ফিরলে আমার ছেলে দরজা খুলে আমার হাতে ফুল দেখে মুচকি হাসল। আমি তার হাতে র্যাপিং করা গোলাপের স্টিকটা ধরিয়ে দিলাম।
সে তার মার হাতে দিয়ে বলল, “তোমার জন্য বাবার ভ্যালেন্টাইন গিফট।”
ওর মা খানিকটা লজ্জা পেল। কিন্তু স্টিকটা নিয়ে বলল, “চমৎকার গোলাপ।”
আমি অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকালাম আর তখনই ফুলের দোকানের সেই বৃদ্ধার কথাগুলো আমার কানে বাজতে লাগলো।
আমি মেয়েদের জামা কাপড় খুব ভালো কিনতে পারি না। কিন্তু আমি যখন স্ত্রীকে সাথে না নিয়ে তার জন্য কিছু কিনি তখন সে বলে, কাপড়টা খুব সফট আর রঙটা খুবই সুন্দর।
গত রোজার ঈদের আগে সে লিভারপুলের ইন্ডিয়ান দোকানগুলো চষে ফেলেছে। কোন সালোয়ার কামিজ তার মনে ধরেনি। আমি ঈদের আগের শনিবারে প্রথম দোকান থেকে তার জন্য সালোয়ার কামিজ কিনে এনেছি।
সে বিস্ময়ে বিষম খেয়ে বলল, “ওইদিন এতো চমৎকার ড্রেসটা কেন আমার চোখে পড়েনি!”
তার ভালবাসার বিস্ময়ের আমি হার মেনেছি।
বিকালে ম্যানেজারের রুমে উকি দিতেই দেখি তার ডেস্কে গোলাপের সমারোহ। আমি ঢুকে বললাম, “উঠে দাঁড়াও দেখি!”
সে কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, “কেন? কেন?”
তারপরই সে উঠে দাঁড়ালো।
আমি বললাম, “ফুলসহ তোমার কিছু ছবি তুলবো।”
“তাহলে তো ভালোই হয়। আমি ছবিগুলো আমার হাসব্যান্ডকে পাঠাবো। ও খুব খুশি হবে।”
লেখক: প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
ইমেইল: naiem.abdullah65@gmail.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |