ওমানের মাস্কাট শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম ও ঘনবসতিপূর্ণ জায়গার নাম রুই-হামিরিয়া। বিকালে অথবা যে কোন ছুটির দিনে এখানকার ভিড় থাকে চরম।
Published : 19 Dec 2016, 03:52 PM
তখন ওমানের এই শহরটির সাথে বাংলাদেশের গুলিস্তানের কোন তফাৎ থাকে না।
ছুটির দিনে রুই গেলাম। তিনবার চক্কর দিয়ে কপালগুণে গাড়ি পার্ক করার একটা জায়গা পেলাম। গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর এগুতেই এক পাকিস্তানি আমাকে উদ্দেশ্য করে কী যেন বললো! বুঝলাম না। তাই দাঁড়ালাম।
পাকিস্তানি আমার কাছে এসে জানাল, আমার ভুঁড়ি অনেক বেড়ে গেছে। ওর বড় ভাইয়েরও একই সমস্যা ছিল। উনি অমুক দোকানের অমুক ব্র্যান্ড ব্যবহার করে এখন স্লিম।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। চলে যাচ্ছি। পাকিস্তানি বিদায় বেলায় দোকানটার নাম আবার মনে করিয়ে দিল।
নিজের ভিতরে আমার অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল। ফতুয়াটা বেশি আঁটসাঁট হয়ে গেছে। ভুঁড়িটা কারো পরোয়া না করেই দৃষ্টিকটুভাবে বেরিয়ে আছে।
ঘণ্টাখানেক বাজারের এমাথা-ওমাথা ঘুরে কিছু সদাই করলাম। ফিরতি পথে আরেক পাকিস্তানি আমার পথ আটকালো। কথা সে-ই একই। আমার ভুঁড়িটা অনেক বেড়ে গেছে।
আগে সে নিজেও আমার মত ছিল। তবে অমুক দোকানের অমুক ব্র্যান্ড ব্যবহার করে এখন সে স্লিম। দুই পাকিস্তানির দেয়া দোকানের নাম ও ব্র্যান্ড একই। শুধু একজনের বড় ভাই, আরেকজন নিজেই ভুক্তভোগী। এবার আর আমার বুঝতে বাকি রইলো না, এরা সেই দোকানের প্রোমোটর হিসেবে কাজ করছে।
এবার আমি ওকে প্যাঁচানো শুরু করলাম। প্রথমে স্বীকারই করে না। পরে আমার কার্ড দিয়ে বললাম,আপনার মত কিছু লোক দরকার। কার্ড দেখে হয়ত কিছুটা আশ্বস্ত হল। পরে আমতা আমতা করে সব স্বীকার করলো।
মধ্যপ্রাচ্যে যে কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া অনেক ব্যয়বহুল। তাই বিজ্ঞাপনের জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এখানে সামান্য একটা বিলবোর্ডের বাৎসরিক ব্যয় পনের হাজার রিয়েল।
আমাদের হিসেবে মাসিক ব্যয় আড়াই লাখ টাকার কিছু বেশি। তবে আরব দেশে আউটডোর কমিউনিকেশনের জন্য মুপিস বেশ জনপ্রিয়। মুপিস অনেকটা বিলবোর্ডের মতই। তবে আকারে অনেক ছোট।
এর আকার অনেকটা বড় পোস্টারের মতো। সাধারণত রাস্তার আইল্যান্ডে থাকে। বিলবোর্ডের মতো এর অবস্থান অনেক উপরে হয় না। মানুষের নাগালের মাঝেই থাকে। অনেকটা আমাদের দেশে যেমন কিছুদূর পর পর 'অমুক শহর ওতো কিলোমিটার' লেখা থাকে সেরকম। তবে এর খরচও অনেক।
অত্যাধিক গরমের কারণেই এখানকার মানুষদের ঘোরাঘুরি ও আনন্দের একমাত্র জায়গা শপিং মল ও সিনেমা হল। যে কারণে শপিং মলে ও সিনেমা হলে পাওয়া যায় হরেক রকম বিজ্ঞাপন। গাড়ির কোন নতুন মডেল আসলেই তা শপিং মলের ভিতরে জায়গা করে নেয়। উদ্দেশ্য একটাই-বিজ্ঞাপন।
ওমানিদের নিজস্ব টিভি চ্যানেল 'ওমান টিভি'। তবে অধিকাংশ ওমানিরা এখন হিন্দি চ্যানেলে আসক্ত। যারা হিন্দি বুঝে না, তাদের জন্য রয়েছে আরবিতে তর্জমা করা হিন্দি ফিল্ম ও নাটক।
এই চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয়তাও বেশ তুঙ্গে। জি আফলাম, বিফরইউ, এমবিসি বলিউড প্রভৃতি চ্যানেল ওমানিদের কাছে বেশ পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞাপনদাতাদের নেক নজর আছে এই চ্যানেলগুলোর উপর।
এর পরেই আছে 'হাই এফএম' ও 'হালা এফএম'। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু রেডিও চ্যানেল ওমানে শোনা যায়। আর ইংরেজি পত্রিকার মাঝে 'টাইমস অফ ওমান' বেশ জনপ্রিয়।
ডিজিটাল মিডিয়ার মাঝেও আছে ওমানিদের পদাচারণা। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেটা ওদের কাছে অতটা জনপ্রিয় নয়। ওমানিদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় 'হোয়াটস অ্যাপ'। 'হোয়াটস অ্যাপ' অ্যাকাউন্ট ছাড়া কোন ওমানি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এরা সব সময় 'হোয়াটস অ্যাপ'-এ সরব। ড্রাইভিং করা অবস্থায়ও এরা 'হোয়াটস অ্যাপ' চালাতে অভ্যস্ত। এখানে যে কোন সংবাদ মুহূর্তের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটস অ্যাপের কল্যাণে। এমনকি ওদের অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
প্রবাসীদের রুচির ভিন্নতার কারণেই এখানকার মার্কেটারদের হিমশিম খেতে হয়। খোদ ভারতেই আছে হরেক রকম রুচির সমাহার। ভারতের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকার রুচি সম্পূর্ণই ভিন্ন।
এছাড়া আছে ভাষার ভিন্নতা। পাকিস্তানেও রয়েছে পাঠান আর পাঞ্জাবিদের রুচি ও ভাষার ভিন্নতা। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আচরণও এখানে ভিন্ন। বাংলাদেশে যে সকল টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি- জিআরপি একেবারে তলানীতে থাকে, সেই চ্যানেলগুলোই এখানে বেশ জনপ্রিয়।
এই ভিন্নতার পেছনে বেশ যৌক্তিক কারণ আছে। যৌক্তিক কারণগুলো আর তুলে ধরলাম না। শুধু ভিন্নতার এক চিলতে নমুনা দিয়ে ভিনদেশি মার্কেটারের নাকানি-চুবানি খাওয়ার এক আংশিক চিত্র তুলে ধরার বৃথা চেষ্টা চালালাম।
লেখক: হেড অফ মার্কেটিং, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি, দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!