আগ্রহ নিয়ে প্রসপেক্টাসটির পাতা উল্টে দেখতে লাগলাম। ‘ফল’ সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। সেই সাথে বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
একটা জায়গায় গিয়ে চোখটা আটকে গেল। ইয়োগা’র বেশ কিছু কোর্সের বিস্তারিত বিবরণ লেখা রয়েছে। একজন ইয়োগা আর্টিস্ট হিসেবে ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল। বিশেষ করে,এটা ভেবে যে ইয়োগা আজ এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গেছে,যেখানে বিশ্ববিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও কোর্স করানো হয়। কেবল তাই নয়,যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ইয়োগা নিয়ে উন্মাদনা কতটা এবং তাতে আমার অংশ নেয়া নিয়েই এই লেখা।
একটা সময় ছিল যখন ইয়োগা অনেকটা ব্যক্তিগত সাধনার পর্যায়ে ছিল। সেই গণ্ডি পেরিয়ে ‘ইয়োগা’ এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। ইয়োগা আজ পাদ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হলেও এর ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। আর এই সাধনার সূত্রপাত হয়েছিল প্রাচীন ভারতে। কিন্তু কিভাবে এই ইয়োগা এখন বিশ্বজনীন হয়ে উঠলো ?
২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব ইয়োগা’ হিসেবে একটি দিনকে ঠিক করে দেয়। পরের বছর,২০১৫ সালের ২১ জুন,বিশ্বজুড়ে প্রথমবারের মতো দিনটি পালিত হয়।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি,বাংলাদেশে যখন ‘ইয়োগা’র খুব একটা প্রসার হয়নি, তখন অল্প কিছু মানুষের সাথে আমিও ব্যক্তিগতভাবে এটি নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল গড়ে তুলি ‘লিউজা’স ইয়োগা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে যখন ‘ইয়োগা ডে’ পালিত হচ্ছিল,তখন ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে লিউজা’স ইয়োগার পক্ষ থেকে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞ ও লেখক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল ছাড়াও অনেক বিশিষ্টজন অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাক তরুণ শিক্ষার্থী সেই সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন।
এই অনুষ্ঠানটির কথা বলার কারণ সেদিন তরুণদের চোখেমুখে আমি ইয়োগাকে মনে প্রাণে ধারণ করার ঝলকানি দেখেছিলাম। নিউ ইয়র্কে এসে ইয়োগা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করার আগে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা ভাবি। সেই লক্ষ্যে আমি যোগ দেই,উডসাইড এভিনিউর ‘ইউএস দেবানন্দ ইয়োগা সেন্টারে’। সেখানেই চলছে আমার ইয়োগা সাধনা।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ইয়োগা নিয়ে অন্যতম বৃহৎ আয়োজনটি হয়ে গেল নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে। ‘সলসটাইস ইন টাইম স্কয়ার: মাইন্ড ওভার ম্যাডনেস ইয়োগা ২০১৬’ এই শিরোনামে এক মহাযজ্ঞই যেন ছিল ২০ জুনের সেই ইয়োগা উৎসবে।
ম্যানহাটনের ব্যস্ত রাস্তায় ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একটানা এই আয়োজনে পৃথিবীর নানা প্রান্তের হাজারো মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। একই কাতারে দাঁড়ানো নানান বর্ণের মানুষ। এক সাথে ইয়োগা করছেন। সেখানে সকাল ৯টা থেকে ১০টার সেশনে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইয়োগা শিক্ষক সারাহ বেল এই সেশনে প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন।
পাশেই তৈরি করা হয় ইয়োগা ভিলেজ। সেখানে ছিল নানা আয়োজন। বাংলাদেশের ইয়োগা আর্টিস্ট হিসেবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে টেলিভিশনের জন্যে আমার একটি সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়। হাজারো লোকের সাথে পৃথিবীর রাজধানী খ্যাত নিউ ইয়র্কের ব্যস্ততম রাস্তায় ইয়োগা করার অভিজ্ঞতা আমার জন্যে ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।
এবার ১৩তম আসর হয়ে গেছে ‘ব্রায়ান্ট পার্ক ইয়োগা’র। এবারের এই উৎসবটি শুরু হয় ১৭ মে। যা চলে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ব্রায়ান্ট পার্কের সাথে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল ‘অ্যাথলেটা’ এবং ‘ইয়োগা জার্নাল’।
সেখানে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা যে কত,তা না দেখলে বিশ্বাসই হয়তো হতো না। শেখা, দেখা এবং আরও প্রস্তুত করার এই মঞ্চে নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে হয়।
লেখক: ইয়োগা আর্টিস্ট, লেখক এবং উপস্থাপক। মেইল: Leuza.yoga@gmail.com
এই লেখকের আরও পড়ুন: