নেতাকর্মীদের জেলে নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
Published : 26 May 2015, 05:12 PM
মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় গত জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের ‘আন্দোলনের’ দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কোনো আন্দোলনই এক চেষ্টায় সফল হয় নাই। ভাষা আন্দোলন বহু বছর ধরে হয়েছে।
“এখন আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেককে গুম করে হারিয়ে ফেলা হয়েছে ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার যদি মনে করে থাকে, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রাখলে বিএনপি আর ক্ষমতায় আসবে না। তাহলে তারা (সরকার) ভুল চিন্তা করছে।
‘লড়াইয়ের ময়দানে বিএনপির পাশে জনগণ যে নেই’ তা স্বীকার করে নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “সুযোগ পেলেই তারা জবাব দেবে; এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। অত্যাচারী, নিপীড়নকারী ও গণতন্ত্র নস্যাৎকারী সরকারের পতন ঘটবেই।”
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের এক বছর পূর্তির সময় সমাবেশ করতে না পেরে ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে টানা অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিন মাস ধরে চলা টানা অবরোধের সঙ্গে ফাঁকে ফাঁকে হরতাল দেয় বিএনপি। অবরোধ-হরতালে রাজধানীসহ সারা দেশে গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়ে শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়; অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন অনেকে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র ও শহীদ জিয়া’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
৩০ মে জিয়ার মৃত্যুদিবসে পক্ষ কালব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি, যার অংশ হিসেবে ড্যাবের এই আলোচনা সভা।
দলের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির মামলা দিলেও একটিও তারা আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। তারপরও তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ দুর্নীতিবাজ বলা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন করেও বিএনপিকে নাই করা যায়নি। এসব করে কী বিএনপি নাই করা যাবে?”
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আওয়ামী লীগের নানা কটূক্তি’র কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের লোকেরা বলে, জিয়া নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, পাকিস্তানি চর ছিলেন। যারা এসব কথা বলে, তারা নিজেরাই মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। মুর্খের মতো কথা বলা কারো উচিৎ নয়। যেসব লোকেরা শহীদ জিয়া সম্পর্কে সমালোচনা করেন, তাদের অবস্থান আজ কোথায়?
“তাদের কাছে আমি প্রশ্ন করতে চাই, জিয়াকে বীরোত্তম খেতাব কোন সরকার দিয়েছিল। জিয়া বীরোত্তম খেতাব পান তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে, যার নেতা ছিলেন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বনির্ভর অর্থনীতিসহ আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান, “সব মানুষকে নিয়ে গৌরব করা যায় না। আমরা যারা বিএনপি করি, তারা সৌভাগ্যবান এজন্য যে, আমাদের নেতাকে নিয়ে আমরা গৌরব করতে পারি। জিয়া শুধু মুক্তিযুদ্ধে ঘোষণাই নয়- মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি আমাদের জাতিসত্ত্বার সুস্পষ্ট পরিচয় দিয়ে গেছেন- আমরা বাংলাদেশি। যেজন্য সরকার ১৫দশ সংশোধনীতে সংবিধানের অনেক কিছু বাদ দিলেও ‘বাংলাদেশি’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ বাদ দিতে পারেনি।”
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাক রহিম স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাচ্চু এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু বক্তব্য রাখেন।